এসএসসি ভোকেশনাল কোর্স

এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) ট্রেড কোর্স “কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি”

“কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি” হল বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা হিসাবে এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) পর্যায়ে যে বিভিন্ন ট্রেড কোর্স গুলো চালু আছে তার মধ্যে অন্যতম। যে কোন দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। এই নিবন্ধে আমরা ট্রেড কোর্সে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি কেন পড়া উচিত, এর পাঠ্যক্রম, এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা, চাকরির ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করবো।

Table of Contents

এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) শিক্ষাক্রম পরিচিতি

মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার সমন্বয়ে পরিচালিত এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) শিক্ষাক্রমের মেয়াদ দুই বছর যা নবম ও দশম শ্রেণীতে পাঠদান করা হয়। এই শিক্ষাক্রমে সাধারণ বিষয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবশ্যিকভাবে ট্রেড ভিত্তিক বিষয়ে পাঠদান করা হয়। এই শিক্ষাক্রম সমাপ্ত করে একজন শিক্ষার্থী সরাসরি দক্ষ জনশক্তি হিসেবে দেশ ও বিদেশে চাকরিতে প্রবেশ, আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হওয়া সহ উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

ট্রেড কোর্স কি এবং কিভাবে পড়ানো হয়

এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) শিক্ষা ব্যবস্থায় নবম ও দশম শ্রেণীতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এর মত সাধারণ বিষয়ের পাশাপাশি বাস্তবমুখী শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে যেকোনো একটি কর্মমুখী বিষয়ে আবশ্যিকভাবে পড়াশোনা করতে হয়। কর্মমুখী এই আবশ্যিক বিষয়টিকে ট্রেড কোর্স বলা হয়। ট্রেড ভিত্তিক আবশ্যিক বিষয়টি ট্রেড ১ ও ট্রেড ২ নামে দুটি ভাগে বিভক্ত, যার প্রতিটি আবার প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্রে বিভক্ত। 

ট্রেড ১ ও ট্রেড ২ এর প্রথম পত্র নবম শ্রেণীতে এবং দ্বিতীয় পত্র দশম শ্রেণীতে পাঠদান করা হয়। কোর্স সম্পর্কে তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি শিল্প কারখানায় ছয় সপ্তাহের জন্য বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। বর্তমানে ভোকেশনাল শিক্ষা ব্যবস্থায় মোট ৩১ টি ট্রেড কোর্স চালু আছে। এর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে।

এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) শিক্ষাক্রমে ট্রেড সমূহের তালিকা 

বর্তমানে ভোকেশনাল শিক্ষা ব্যবস্থায় মোট ৩১ টি ট্রেড কোর্স চালু আছে। এর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এগুলো হলো

  • এগ্রোবেজড ফুড 
  • জেনারেল ইলেকট্রনিক্স 
  • অটোমোটিভ 
  • বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স 
  • উড ওয়ার্কিং 
  • সিরামিক
  • সিভিল কনস্ট্রাকশন 
  • কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি 
  • সিভিল ড্রাফটিং উইথ ক্যাড
  • মেকানিকাল ড্রাফটিং উইথ ক্যাড
  • ড্রেস মেকিং 
  • ডাইং, প্রিন্টিং এন্ড ফিনিশিং
  • ইলেকট্রিক্যাল ইনটেন্যান্স ওয়ার্কস 
  • ফার্ম মেশিনারী 
  • ফিস কালচার এন্ড ব্রিডিং 
  • ফুড প্রসেসিং এন্ড প্রিজারভেশন
  • জেনারেল মেকানিক্স 
  • লাইভস্টক রিয়ারিং এন্ড ফার্মিং 
  • মেশিন টুলস অপারেশন 
  • পোল্ট্রি রিয়ারিং এন্ড ফার্মিং 
  • পেশেন্ট কেয়ার 
  • জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস 
  • প্লাম্বিং এন্ড পাইপ ফিটিং
  • রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং 
  • গ্লাস
  • ফ্লাওয়ার, ফ্রুট এন্ড ভেজিটেবল কাল্টিভেশন 
  • উইভিং 
  • ওয়েল্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন
  • আর্কিটেকচারাল ড্রাফটিং উইথ ক্যাড
  • নিটিং 
  • শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং

কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি পাঠ্যক্রম সম্পর্কে 

এসএসসি দাখিল ও ভোকেশনাল শিক্ষা ব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে ট্রেড কোর্স হিসেবে এই ট্রেড কোর্সটি বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। বিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত দক্ষ শিক্ষকদের পাশাপাশি কম্পিউটার ল্যাব এর সুব্যবস্থা থাকে। তাত্ত্বিক বিষয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটারে হাতে-কলমে কাজ শেখানো হয়। এই ট্রেড কোর্সে শিক্ষার্থীদের যে সকল বিষয়ে পাঠদান করানো হয় তা হল:

  • কম্পিউটার পরিচিতি ও ব্যবহার
  • কম্পিউটার হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার এর প্রাথমিক ধারণা
  • স্প্রেডশিট ব্যবহার করে ওয়ার্কশীট ও চার্ট তৈরি করা 
  • ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট 
  • কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা
  • হার্ডওয়ার অ্যাসেম্বলিং এবং সফটওয়্যার ইনফরমেশনে দক্ষতা অর্জন 
  • নেটওয়ার্কিং, ইন্টারনেট ও ইমেইল সম্পর্কে ধারণা 
  • আউটসোর্সিং সম্পর্কে ধারণা

এই ট্রেড কোর্সটি দুটি ভাগে বিভক্ত যথা কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি-১ ও কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি-২। নবম শ্রেণীতে এই দুটি বিষয়ের প্রথম পত্র এবং দশম শ্রেণীতে দ্বিতীয় পত্র পড়ানো হয়। প্রতিটি বিষয়ে মোট ২০০ নম্বর বরাদ্দ থাকে যার ১০০ নম্বর তত্ত্বীয় এবং ১০০ নম্বর ব্যবহারিক। এছাড়াও শিল্প কারখানায় বাস্তব প্রশিক্ষণের জন্য ৫০ নম্বর বরাদ্দ থাকে। 

কোন কোন প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি ট্রেড কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন 

বাংলাদেশের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেখানে কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তির ট্রেড কোর্স চালু আছে সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে আপনি এই কোর্সটি বেছে নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষক এবং ল্যাবে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাব থাকতে পারে। তাই ভর্তি হওয়ার পূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। 

কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা 

এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) শেষে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। যে কেউ চাইলে উচ্চমাধ্যমিকে ভোকেশনাল ট্রেড কোর্সে এই বিষয়ের উপর বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এসএসসি  শেষে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থায় কম্পিউটার সাইন্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হতে পারবেন। এছাড়াও যদি কেউ সাধারণ বিষয়গুলোতে পাস না করে শুধুমাত্র ট্রেড বিষয়ে পাস করে তবুও সে উচ্চমাধ্যমিকে সংশ্লিষ্ট ট্রেডে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি ট্রেডে ক্যারিয়ার

এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) কোর্সটির জাতীয় দক্ষতার দ্বিতীয় ও তৃতীয় মানের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে। এতে করে নবম ও দশম শ্রেণীতে শুধুমাত্র ট্রেড বিষয়ে উত্তীর্ণ হলেও শিক্ষার্থীরা জাতীয় দক্ষতার দ্বিতীয় ও তৃতীয় মান অর্জন করে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা দক্ষ কর্মী হিসেবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পায়। চাকরির পাশাপাশি অনেকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ক্যারিয়ার গঠন করে। এতে করে ঘরে বসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে আয়ের সুযোগ পাওয়া যায়।  এছাড়াও সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে দক্ষ কর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যায়। 

এছাড়াও অনেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানেও ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ পাওয়া যায়।

কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ট্রেডে পড়াশোনা শেষে যে সকল প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে পারেন 

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি অফিসে তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। ফলে প্রতিটি অফিসেই কম্পিউটার অপারেটরের প্রয়োজন হয়। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন অফিস কলকারখানা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন অটোমেটিক মেশিন কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। ফলে একজন দক্ষ কম্পিউটার অপারেটর এর চাহিদা সর্বত্র। 

এই ট্রেডে পড়াশোনা শেষে নিম্নোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন:

  • সরকারি সকল অফিস সমূহে কম্পিউটার অপারেটর ও টাইপিস্ট হিসেবে 
  • বেসরকারি বিভিন্ন অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে
  • মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিতে 
  • শিল্প কারখানায় কম্পিউটারাইজড মেশিন অপারেটর হিসেবে
  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে

শেষ কথা

পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সাথে দেশে ও বিদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও বিদেশে চাকরির বাজারের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষাক্রমে ট্রেড কোর্সে কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত শিক্ষা লাভের গুরুত্ব অপরিসীম। কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ট্রেড কোর্সটি আমাদের বিপুল জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারে।


লিমা খাতুন,এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) ট্রেড কোর্স “কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি”, তেজগাঁও, ঢাকা, প্রকাশ-১১ নভেম্বর, ২০২৪,
<https://abhinoboschool.com/এসএসসি/ দাখিল (ভোকেশনাল) ট্রেড কোর্স “কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি”/>

কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর

“কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি” ট্রেড কোর্সে কী বিষয় সম্পর্কে শেখায়?

এই কোর্সটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের কম্পিউটার এবং তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ইন্টারনেট ব্যবহারের কৌশল, প্রোগ্রামিং, অফিস সফটওয়্যার সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে শেখায়।

 “কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি” ট্রেড কোর্সটি কতদিনের?

“কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি” কোর্সটি সাধারণত ২ বছর মেয়াদী। এটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণীতে পড়ানো হয়।

বর্তমানে ভোকেশনাল শিক্ষা ব্যবস্থায় মোট কত টি ট্রেড কোর্স চালু আছে?

বর্তমানে ভোকেশনাল শিক্ষা ব্যবস্থায় মোট ৩১ টি ট্রেড কোর্স চালু আছে।

শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে

লেখক সম্পর্কে

mstlima

নিউজ
চাকরি
Home
Question
Search