ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সরাসরি গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর এক নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া। এই সিস্টেম বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণকে একত্রিত করে দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে। বিদ্যুৎ সঠিকভাবে বিতরণ করা না হলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও শিল্প উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। তাই এই সিস্টেমের সঠিক পরিচালনা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম এর সংজ্ঞা
- ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম কী এবং এর কাজের বিবরণ
- প্রাইমারি ট্রান্সমিশন ও সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন এর পার্থক্য
- ফিডার ও ডিস্ট্রিবিউটর
- ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম
- শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের পার্থক্য
- ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি
- AC/DC ব্যবহারের যৌক্তিকতা এবং এর সুবিধা
- ওভারহেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইন এর সুবিধা ও অসুবিধা
- উচ্চ ভোল্টেজ ট্রান্সমিশনের সুবিধা
- সিস্টেম লস ও পাওয়ার ফ্যাক্টর
- ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ
- ওভারহেড লাইনের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা
- আর্থিং এবং সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব
- ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম এর শেষ কথা
- ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম এর সংজ্ঞা
পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে শেষ ব্যবহারকারীদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি দুটি ধাপে বিভক্ত: প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন।
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম কী এবং এর কাজের বিবরণ
ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সমিশন সিস্টেম বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উচ্চ ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে সাব-স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর, ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম সেই বিদ্যুৎকে গ্রাহকদের কাছে নিরাপদ ভোল্টেজে বিতরণ করে। এটি বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা যা ট্রান্সফরমার ও তারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
প্রাইমারি ট্রান্সমিশন ও সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন এর পার্থক্য
প্রাইমারি ট্রান্সমিশন উচ্চ ভোল্টেজে (110KV, 132KV, 230KV, 400KV) বিদ্যুৎ সরবরাহ করে দূরবর্তী সাব-স্টেশনে পাঠায়। সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন সাব-স্টেশন থেকে কম ভোল্টেজ (33KV, 66KV) দিয়ে স্থানীয় সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা পরবর্তীতে ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ফিডার ও ডিস্ট্রিবিউটর
এই দুটি হল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উভয়ের মধ্যে কার্যক্রমে পার্থক্য রয়েছে, যা বিদ্যুৎ বিতরণে প্রভাব ফেলে।
ফিডার এবং ডিস্ট্রিবিউটরের মধ্যে পার্থক্য
এটি হলো সেই লাইন, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নির্দিষ্ট লোড সেন্টারে। ফিডার লাইনে কোনো ট্যাপিং থাকে না, অর্থাৎ এটি থেকে সরাসরি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় না। অন্যদিকে, ডিস্ট্রিবিউটর হলো সেই লাইন, যা সরাসরি গ্রাহকের সংযোগে ব্যবহৃত হয়। ডিস্ট্রিবিউটর লাইনে একাধিক ট্যাপিং থাকে এবং গ্রাহকের সেবা মেইনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
ফিডার লাইনের বৈশিষ্ট্য ও ডিস্ট্রিবিউটরের ভূমিকা
ফিডার লাইনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি পুরো লাইন জুড়ে কারেন্টের ঘনত্ব সমান থাকে এবং এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট লোড সেন্টারে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হয়। ফিডার লাইনের ডিজাইন এমনভাবে করা হয় যাতে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনও ভোল্টেজ ড্রপ না হয়। ডিস্ট্রিবিউটরের ভূমিকা হলো ফিডার থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে বিভিন্ন গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা। এটি মূলত শহর বা গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ডিস্ট্রিবিউটর লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকের সেবা মেইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় এবং এর সম্পূর্ণ দৈর্ঘ্য বরাবর ভোল্টেজের কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।
এভাবে, ফিডার ও ডিস্ট্রিবিউটর বিদ্যুৎ বিতরণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে, যা সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে।
ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম
ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মূল কাজ হলো বিদ্যুৎকে সঠিক ভোল্টেজে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো। এটি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি ডিস্ট্রিবিউশন হিসেবে বিভক্ত।
প্রাইমারি ট্রান্সমিশন সিস্টেম
প্রাইমারি ট্রান্সমিশন সিস্টেম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে উচ্চ ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা দীর্ঘ দূরত্বে সঞ্চালিত হয়।
- প্রাইমারি ট্রান্সমিশন কী, এর ভোল্টেজ লেভেল: প্রাইমারি ট্রান্সমিশন হল উচ্চ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা, যা ১১০কেভি, ১৩২কেভি, ২৩০কেভি এবং ৪০০কেভি পর্যন্ত ভোল্টেজ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এই সিস্টেম বিদ্যুৎকে দূরবর্তী সাব-স্টেশনে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।
- বাংলাদেশে বিদ্যমান প্রাইমারি ট্রান্সমিশন উদাহরণ: বাংলাদেশে বিবিয়ানা-কালিয়াকৈর ৪০০কেভি ট্রান্সমিশন লাইন দেশের একটি প্রধান প্রাইমারি ট্রান্সমিশন লাইন, যা গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন সিস্টেম
সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন সিস্টেম সাব-স্টেশন থেকে কম ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে স্থানীয় বিতরণের জন্য।
- সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন কী, এর ভোল্টেজ লেভেল: সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন হলো ৩৩কেভি ও ৬৬কেভি ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা, যা স্থানীয় সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এই ভোল্টেজ সাধারণত বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- উৎপাদন থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের ধাপগুলো: বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে প্রথমে প্রাইমারি ট্রান্সমিশন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, তারপর সাব-স্টেশনগুলোতে সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন মাধ্যমে কম ভোল্টেজে সরবরাহ করা হয়। অবশেষে, ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়।
শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণের পার্থক্য
শহরে ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম অত্যাধুনিক এবং দ্রুতগতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। গ্রামীণ অঞ্চলে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন দীর্ঘ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা দেরি হয়।
ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি
বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য AC ও DC প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, ওভারহেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন দুই ধরণের ট্রান্সমিশন ব্যবস্থার সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।
AC/DC ব্যবহারের যৌক্তিকতা এবং এর সুবিধা
AC (অল্টারনেটিং কারেন্ট) এবং DC (ডিরেক্ট কারেন্ট) বিদ্যুৎ সঞ্চালনের দুটি প্রাথমিক পদ্ধতি। AC ব্যবহারের প্রধান সুবিধা হলো এটি সহজে স্টেপ আপ বা স্টেপ ডাউন করা যায়, যা দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে কার্যকর। AC ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে উচ্চ ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করলে লাইনের লস কম হয় এবং এটি সাধারণত ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
DC এর ব্যবহার প্রধানত উচ্চ ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য সীমিত থাকে, তবে DC ট্রান্সমিশন তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এবং দীর্ঘ দূরত্বে কম লস হয়। এটি বিশেষত সাবমেরিন কেবল বা ইন্টারকন্টিনেন্টাল সিস্টেমের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ওভারহেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রান্সমিশন লাইন এর সুবিধা ও অসুবিধা
ওভারহেড ট্রান্সমিশন লাইনের প্রধান সুবিধা হলো এটি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম এবং ফল্ট নির্ণয় সহজ। তবে, এটি ঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ওভারহেড লাইনের মাধ্যমে ৬৬কেভি বা তার বেশি ভোল্টেজ নিরাপদে সঞ্চালন করা সম্ভব।
আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন স্থাপন ব্যয়বহুল হলেও, এটি সুরক্ষিত এবং পরিবেশের উপর কম প্রভাব ফেলে। তবে, আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনে ফল্ট নির্ণয় ও রক্ষণাবেক্ষণ করা কঠিন এবং ভোল্টেজ লিমিট ৬৬কেভির বেশি হলে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
উচ্চ ভোল্টেজ ট্রান্সমিশনের সুবিধা
এটি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি। এটি লাইন লস কমিয়ে ট্রান্সমিশন দক্ষতা ও ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- লাইন লস কমানো ও ট্রান্সমিশন দক্ষতা বৃদ্ধি: উচ্চ ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করলে লাইন লস উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। কম ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সময় লাইন রেজিস্ট্যান্সের কারণে লস বেশি হয়, কিন্তু উচ্চ ভোল্টেজ ব্যবহার করলে কারেন্ট কম হয়, ফলে রেজিস্ট্যান্স দ্বারা সৃষ্ট লসও কমে যায়। এই কারণে বিদ্যুৎ সঞ্চালন দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত কম শক্তি অপচয় হয়।
- ভোল্টেজ ড্রপ এবং রেগুলেশনের উন্নতি: উচ্চ ভোল্টেজ সিস্টেমে ভোল্টেজ ড্রপের পরিমাণও কম হয়। কম ভোল্টেজে দীর্ঘ দূরত্বে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সময় ভোল্টেজ ড্রপ বেশি হয়, যা বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু উচ্চ ভোল্টেজে সঞ্চালিত হলে ভোল্টেজ ড্রপ কম হয় এবং রেগুলেশন উন্নত হয়। এর ফলে নিরবচ্ছিন্ন ও স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়, যা শিল্প এবং বাণিজ্যিক খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চ ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকরী ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
সিস্টেম লস ও পাওয়ার ফ্যাক্টর
সিস্টেম লস এবং পাওয়ার ফ্যাক্টর বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার দক্ষতার উপর প্রভাব ফেলে। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে এর অর্থনৈতিক প্রভাবও ব্যাপক হতে পারে।
- সিস্টেম লস কী এবং কীভাবে কমানো যায়: সিস্টেম লস হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর পথে বিদ্যুতের অপচয়। এটি প্রধানত তারের রেজিস্ট্যান্স, যন্ত্রপাতির অকার্যকারিতা, এবং বিভিন্ন কারিগরি ও অকারিগরি সমস্যার কারণে ঘটে। সিস্টেম লস কমানোর জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনগুলির মানোন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, লোড ব্যালেন্সিং এবং লাইন ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করে লস কমানো সম্ভব।
- পাওয়ার ফ্যাক্টরের গুরুত্ব ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব: পাওয়ার ফ্যাক্টর বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় বিদ্যুতের দক্ষতার একটি সূচক। কম পাওয়ার ফ্যাক্টর থাকলে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে বেশি শক্তি খরচ হয়, যার ফলে লাইন লস বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এর ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নত করা হলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার দক্ষতা বাড়ে, লাইন লস কমে এবং উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সাশ্রয় ঘটে।
সুতরাং, সিস্টেম লস কমানো ও পাওয়ার ফ্যাক্টর উন্নয়ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা ও অর্থনৈতিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক।
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ
বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যুৎ সরবরাহের নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করে এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক।
ওভারহেড লাইনের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা
ওভারহেড লাইনের জন্য ক্রেডল গার্ড এবং লাইটনিং আরেস্টর অপরিহার্য সুরক্ষা ব্যবস্থা। ক্রেডল গার্ড রেললাইন বা সড়কের উপর দিয়ে টানা ওভারহেড লাইনের তার ছিঁড়ে গেলে তা মাটিতে পড়া থেকে রক্ষা করে। লাইটনিং আরেস্টর বজ্রপাতের সময় অতিরিক্ত ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইন থেকে মাটিতে ড্রেন করে দেয়, যা লাইনের ইনসুলেশন ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
আর্থিং এবং সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব
আর্থিং একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা যা বিদ্যুৎ লাইন বা যন্ত্রপাতির অতিরিক্ত ভোল্টেজকে মাটিতে নিষ্ক্রিয় করে। এটি দুর্ঘটনা এবং বৈদ্যুতিক শক থেকে রক্ষা করে। সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করলে সিস্টেম লস বৃদ্ধি পায় এবং সুরক্ষা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সঠিকভাবে আর্থিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ বজায় রাখা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সিস্টেম আরও কার্যকর ও নিরাপদ হয়।
সুতরাং, সঠিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করে।
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম এর শেষ কথা
ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল ভিত্তি, যা বিদ্যুৎকে উৎপাদন কেন্দ্র থেকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়। এর সঠিক কার্যকারিতা অর্থনৈতিক ও দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ বিদ্যুৎ সরবরাহকে আরও কার্যকর, নিরাপদ এবং নিরবচ্ছিন্ন করতে সহায়ক। এর ফলে সিস্টেম লস কমে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের গুণগত মান উন্নত হয়।
লিমা খাতুন,ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, তেজগাঁও, ঢাকা, প্রকাশ-১১ নভেম্বর, ২০২৪,
<https://abhinoboschool.com/ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম/>
ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
পাওয়ার ট্রান্সমিশনে ভোল্টেজ কেন বৃদ্ধি করা হয়?
পাওয়ার লস কমানোর জন্য ট্রান্সমিশন লাইনে ভোল্টেজ বৃদ্ধি করা হয়, কারণ উচ্চ ভোল্টেজে বিদ্যুৎ পরিবহন করলে পরিবাহীতে কম তাপ উৎপন্ন হয়, যার ফলে পাওয়ার লসের হার কমে।
মেগাওয়াট (MW) ও কিলোওয়াট (KW) মধ্যে পার্থক্য কি?
মেগাওয়াট হল এক মিলিয়ন ওয়াটের সমান এবং কিলোওয়াট হল এক হাজার ওয়াটের সমান।
১ মেগাওয়াট (MW) সমান ১,০০০ কিলোওয়াট (kW)।
সাবস্টেশন কি?
সাবস্টেশন হল একটি স্থান যেখানে ট্রান্সফরমার দ্বারা ভোল্টেজ পরিবর্তন (হ্রাস/বৃদ্ধি) করা হয় এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি দিয়ে বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।