ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট হল বিদ্যুৎ প্রবাহের একটি নির্দিষ্ট পথ, যা বিভিন্ন ডিভাইস বা লোডকে সংযুক্ত করে কাজ সম্পন্ন করে। সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে লোডের কার্য সম্পাদন করে এবং আবার সোর্সে ফিরে আসে। ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটকে ভালোভাবে বোঝা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর সঠিক ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ বিদ্যুৎ সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
- ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট কী?
- বিদ্যুৎ চলাচলের পথ ও লোডের মধ্যে সম্পন্ন কাজ
- ইলেকট্রনিক সার্কিটের প্রকারভেদ
- ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের উপাদানসমূহ
- সার্কিটের প্রকারভেদ
- সিরিজ এবং প্যারালাল সার্কিট
- সার্কিট ডিজাইন এবং প্রোটোটাইপিং
- সার্কিট ডিজাইন প্রক্রিয়া
- প্রোটোটাইপিং পদ্ধতি এবং ব্রেডবোর্ডের ব্যবহার
- শেষ কথা
- সফট স্কিল সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট কী?
এই সার্কিট বিদ্যুৎ প্রবাহের এমন একটি পথ, যা ডিভাইস বা লোডের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শক্তি সরবরাহ করে কাজ সম্পন্ন করে। ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট একটি নির্দিষ্ট পথ, যা বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য তৈরি করা হয়। এটি একটি সম্পূর্ণ চক্র বা সার্কিট, যেখানে বিদ্যুৎ উৎস (যেমন ব্যাটারি বা জেনারেটর) থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়ে একটি লোড (যেমন বাল্ব, পাখা) কার্য সম্পাদন করে এবং আবার উৎসে ফিরে আসে।
বিদ্যুৎ চলাচলের পথ ও লোডের মধ্যে সম্পন্ন কাজ
বিদ্যুৎ চলাচলের পথে একটি পরিবাহী তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় এবং লোডের মধ্যে দিয়ে কাজ সম্পন্ন করে। উদাহরণস্বরূপ, বাল্বের ক্ষেত্রে আলো উৎপন্ন হয় এবং পাখার ক্ষেত্রে বাতাস তৈরি হয়।
ইলেকট্রনিক সার্কিটের প্রকারভেদ
ইলেকট্রনিক সার্কিট তিনটি ধরণের হতে পারে—এনালগ, ডিজিটাল এবং মিশ্র সংকেত। প্রতিটির কাজ, ব্যবহার এবং গঠন আলাদা।
এনালগ সার্কিট
এনালগ সার্কিট এমন একটি সার্কিট, যেখানে সিগন্যাল বা ভোল্টেজ সময়ের সাথে ক্রমাগত পরিবর্তিত হতে পারে। এই সার্কিটে বিদ্যুৎ স্রোত বা ভোল্টেজ পরিবর্তনশীল হয় এবং সরাসরি ইনপুট অনুযায়ী আউটপুটে পরিবর্তন আসে। এনালগ সার্কিট সাধারণত রেডিও, অডিও অ্যাম্প্লিফায়ার এবং টিভিতে ব্যবহৃত হয়।
কাজ: এনালগ সার্কিট বিভিন্ন ধরণের সিগন্যালকে প্রসেস করতে পারে, যেমন অডিও বা রেডিও তরঙ্গ। উদাহরণস্বরূপ, রেডিওতে এনালগ সার্কিট সংকেত গ্রহণ করে এবং তা শব্দে রূপান্তরিত করে।
ডিজিটাল সার্কিট
ডিজিটাল সার্কিট এমন সার্কিট যেখানে সিগন্যাল দুটি ভিন্ন মানে (0 এবং 1) পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ, সার্কিটটি শুধুমাত্র দুইটি ধাপের মধ্যে কাজ করে। এটি সাধারণত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়।
কাজ: ডিজিটাল সার্কিট বিভিন্ন লজিক গেটের সাহায্যে তথ্য প্রক্রিয়া করে। উদাহরণস্বরূপ, কম্পিউটারের প্রসেসর একটি ডিজিটাল সার্কিট, যা বিটের মাধ্যমে ডেটা প্রক্রিয়াজাত করে।
মিশ্র-সংকেত সার্কিট
মিশ্র-সংকেত সার্কিট এমন সার্কিট যা এনালগ এবং ডিজিটাল উভয় উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি। এই ধরনের সার্কিটে একটি অংশ ডিজিটাল এবং অন্য অংশ এনালগ হিসেবে কাজ করে।
ব্যবহার: মিশ্র-সংকেত সার্কিট সাধারণত যোগাযোগ ডিভাইস, যেমন মোবাইল ফোনের রিসিভার এবং ট্রান্সমিটার, ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মোবাইলে ইনকামিং সিগন্যাল প্রথমে এনালগ হিসেবে প্রবেশ করে, এরপর তা ডিজিটালে রূপান্তরিত হয় এবং প্রক্রিয়া করা হয়।
ইলেকট্রনিক সার্কিটের এই তিনটি প্রকারভেদ বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এনালগ সার্কিট সিগন্যালকে ক্রমাগত পরিবর্তন করে, ডিজিটাল সার্কিট বাইনারি সিস্টেমে কাজ করে আর মিশ্র-সংকেত সার্কিট উভয় প্রযুক্তির সমন্বয়ে কাজ করে, যা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের উপাদানসমূহ
এই সার্কিটের বিভিন্ন উপাদান একসঙ্গে কাজ করে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিত করে। এই উপাদানগুলোর সাহায্যে সার্কিট কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
- বৈদ্যুতিক সোর্স (Electric Source): বৈদ্যুতিক সোর্স বা উৎস সার্কিটে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এটি ব্যাটারি বা জেনারেটর হতে পারে, যা সার্কিটে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালু রাখে। সোর্স ছাড়া সার্কিট চালু রাখা অসম্ভব।
- পরিবাহী তার (Conductor): পরিবাহী তার বিদ্যুৎ প্রবাহের প্রধান মাধ্যম। এটি তামা বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হয়, যার সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎস থেকে লোড পর্যন্ত চলাচল করে। তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চলাচল সহজেই সম্ভব হয়।
- বৈদ্যুতিক লোড (Electric Load): লোড হলো সেই উপাদান, যা বিদ্যুৎ প্রবাহের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করে। উদাহরণস্বরূপ, বাল্ব আলো দেয়, পাখা বাতাস তৈরি করে এবং মোটর ঘুরতে শুরু করে।
- নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (Control Device): নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র যেমন সুইচ, সার্কিটের বিদ্যুৎ প্রবাহকে চালু বা বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। এটি লোডের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করে।
- রক্ষণ যন্ত্র (Protective Device): রক্ষণ যন্ত্র যেমন ফিউজ বা সার্কিট ব্রেকার সার্কিটকে ত্রুটির হাত থেকে রক্ষা করে। শর্ট সার্কিট বা অতিরিক্ত কারেন্ট হলে এটি সার্কিট বন্ধ করে দেয়, ফলে বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়।
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের এই উপাদানগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ, নিয়ন্ত্রণ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সঠিক উপাদানের ব্যবহার ছাড়া কোনো সার্কিট কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না, তাই প্রতিটি উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম।
সার্কিটের প্রকারভেদ
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। প্রতিটি প্রকারের কাজ, গঠন এবং সমস্যার ধরন ভিন্ন। নিচে ওপেন, ক্লোজড এবং শর্ট সার্কিট নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ওপেন সার্কিট
ওপেন সার্কিট এমন একটি সার্কিট যেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহের পথ কোনো কারণে বিচ্ছিন্ন থাকে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎস থেকে লোড পর্যন্ত বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে না। এই ধরনের সার্কিটে কারেন্ট বা বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ থাকে এবং লোড কোনো কাজ করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা একটি বাতির সুইচ বন্ধ করি, তাহলে সার্কিট ওপেন অবস্থায় থাকে এবং বাতি জ্বলে না।
এটি কোনো ইলেকট্রিক্যাল সমস্যা না হলেও, সার্কিট কার্যকর হয় না। ওপেন সার্কিটে সাধারণত কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকে না, কারণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না।
ক্লোজড সার্কিট
ক্লোজড সার্কিট হলো এমন একটি সার্কিট যেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহের পথ সম্পূর্ণ থাকে। সার্কিটের সব উপাদান সঠিকভাবে সংযুক্ত থাকে এবং বিদ্যুৎ উৎস থেকে লোড পর্যন্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয়। ক্লোজড সার্কিটে বিদ্যুৎ চলাচল অবিচ্ছিন্নভাবে হয়, যার ফলে লোড কার্যকর থাকে এবং সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করে।
উদাহরণ হিসেবে একটি সুইচ অন করা সার্কিটের কথা ভাবুন। যখন সুইচ অন করা হয়, সার্কিট ক্লোজড হয়ে যায় এবং বাতি জ্বলে ওঠে বা পাখা চলতে শুরু করে। ক্লোজড সার্কিটের সঠিক ব্যবস্থাপনা বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শর্ট সার্কিট
শর্ট সার্কিট হলো এমন একটি পরিস্থিতি, যেখানে বিদ্যুৎ নির্ধারিত পথে প্রবাহিত না হয়ে খুব সংক্ষিপ্ত বা অপ্রত্যাশিত পথে সরাসরি সোর্স থেকে লোডে ফিরে আসে। এটি একটি মারাত্মক সমস্যা, কারণ এতে সার্কিটের ওপর প্রচুর চাপ পড়ে এবং অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হয়। এর ফলে তার, লোড বা অন্যান্য উপাদান গরম হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শর্ট সার্কিটের সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ হলো বিদ্যুতের লাইন বা ডিভাইসের ত্রুটির কারণে সরাসরি সংযোগ হয়ে যাওয়া। এটি খুব বিপজ্জনক, কারণ এর ফলে আগুন লাগা বা অন্যান্য বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ধরনের বিপদ থেকে বাঁচতে ফিউজ এবং সার্কিট ব্রেকার ব্যবহৃত হয়। ফিউজ একটি ছোট তারের মতো উপাদান, যা অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহিত হলে গলে যায় এবং সার্কিটকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এটি সার্কিট এবং লোডকে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। সার্কিট ব্রেকার একইভাবে কাজ করে, তবে এটি অটোমেটিক্যালি সার্কিট বন্ধ করে দেয় এবং পরে ম্যানুয়ালি রিসেট করা যায়।
ওপেন, ক্লোজড এবং শর্ট সার্কিটের মধ্যে পার্থক্য এবং তাদের গুরুত্ব বুঝতে পারা অত্যন্ত জরুরি। ক্লোজড সার্কিট স্বাভাবিকভাবে কাজ করে, ওপেন সার্কিট বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করে, এবং শর্ট সার্কিট বিপদ সৃষ্টি করে। ফিউজ এবং সার্কিট ব্রেকারের সঠিক ব্যবহার শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
সিরিজ এবং প্যারালাল সার্কিট
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট দুটি প্রধান প্রকারভেদে বিভক্ত—সিরিজ এবং প্যারালাল সার্কিট। উভয়ের কাজ এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা হয়।
সিরিজ সার্কিটের বৈশিষ্ট্য, সূত্র, এবং ব্যবহার
এটি এমন একটি সার্কিট যেখানে সমস্ত রেজিস্ট্যান্স বা লোড একের পর এক সংযুক্ত থাকে এবং বিদ্যুৎ প্রবাহিত হওয়ার একটিমাত্র পথ থাকে। এই ধরনের সার্কিটে কারেন্ট সমান থাকে এবং প্রতিটি উপাদান বিদ্যুৎ প্রবাহ পায়।
সিরিজ সার্কিটের বৈশিষ্ট্য:
- সার্কিটের সব লোড সমান কারেন্ট পায়। অর্থাৎ, I = I1 = I2 = I3।
- মোট ভোল্টেজ ড্রপ সব লোডের ওপর পড়া ভোল্টেজের যোগফলের সমান। অর্থাৎ, V = V1 + V2 + V3।
- মোট রেজিস্ট্যান্স সমান হয় সব রেজিস্ট্যান্সের যোগফলের সমান। অর্থাৎ, Rt = R1 + R2 + R3।
ব্যবহার:
- সিরিজ সার্কিট সাধারণত টর্চ লাইট, গাড়ির হেডলাইট এবং কিছু সিকিউরিটি ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়। সিরিজ কানেকশনে সব লোডে সমান বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিত হয়, তবে কোনো একটি লোড ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো সার্কিট বন্ধ হয়ে যায়, যা এই সার্কিটের প্রধান অসুবিধা।
প্যারালাল সার্কিটের বৈশিষ্ট্য, সূত্র, এবং ব্যবহার
এটি এমন একটি সার্কিট যেখানে প্রতিটি লোড আলাদাভাবে বিদ্যুৎ উৎসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ, একাধিক পথ থাকে যেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে।
প্যারালাল সার্কিটের বৈশিষ্ট্য:
- প্রতিটি লোডে সমান ভোল্টেজ থাকে। অর্থাৎ, V = V1 = V2 = V3।
- মোট কারেন্ট হয় প্রতিটি লোডের কারেন্টের যোগফলের সমান। অর্থাৎ, I = I1 + I2 + I3।
- মোট রেজিস্ট্যান্সের মান কম থাকে, যা এর কারণে লোড বাড়লেও বেশি কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারে। এর সূত্র: 1/Rt = 1/R1 + 1/R2 + 1/R3।
ব্যবহার:
- প্যারালাল সার্কিট ঘরবাড়ি, অফিস এবং শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বেশি ব্যবহৃত হয়। এতে প্রতিটি লোড আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, এবং একটি লোড নষ্ট হলেও অন্য লোডগুলো চলতে থাকে, যা এই সার্কিটের প্রধান সুবিধা।
সিরিজ-প্যারালাল সার্কিটের ভূমিকা ও মিশ্র ব্যবহারের উদাহরণ
সিরিজ-প্যারালাল সার্কিট হলো সিরিজ এবং প্যারালাল উভয়ের মিশ্রণ। এতে কিছু উপাদান সিরিজে এবং কিছু উপাদান প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। এই ধরনের সার্কিটের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিদ্যুৎ সরবরাহের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা বাড়ানো।
ব্যবহার:
- সিরিজ-প্যারালাল সার্কিট রেডিও, টেলিভিশন, এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়, যেখানে নির্দিষ্ট লোডের জন্য সিরিজ এবং প্যারালাল উভয় বৈশিষ্ট্যই প্রয়োজন হয়। এটি সার্কিটের স্থায়িত্ব এবং দক্ষতা নিশ্চিত করে।
সিরিজ এবং প্যারালাল সার্কিটের কাজের ধরন ও ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। সিরিজ সার্কিটে সব লোড সমান কারেন্ট পায়, তবে একটি লোড নষ্ট হলে পুরো সার্কিট বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে, প্যারালাল সার্কিটে প্রতিটি লোড আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যা এটি বেশি কার্যকর করে তোলে।
সার্কিট ডিজাইন এবং প্রোটোটাইপিং
ইলেকট্রনিক সার্কিট ডিজাইন এবং প্রোটোটাইপিং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা ডিভাইসের কার্যক্ষমতা ও কার্যকারিতা নির্ধারণ করে। সঠিকভাবে ডিজাইন ও পরীক্ষা করা সার্কিট ডিভাইসের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
সার্কিট ডিজাইন প্রক্রিয়া
সার্কিট ডিজাইন প্রক্রিয়া শুরু হয় একটি নির্দিষ্ট কার্যক্রম বা কাজের লক্ষ্য নিয়ে। প্রথমে নির্ধারণ করা হয় সার্কিটের কাজ কী হবে এবং কোন উপাদানগুলো প্রয়োজন হবে। এরপর সার্কিটের স্কেচ বা ডায়াগ্রাম তৈরি করা হয়। সার্কিট ডিজাইনের সময় বিভিন্ন উপাদানের গঠন, সংযোগ এবং বিদ্যুৎ প্রবাহের পথ সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।
ডিজাইন প্রক্রিয়ায় সাধারণত কির্চহফের আইন এবং ওহমের আইন ব্যবহার করা হয়, যা সার্কিটে ভোল্টেজ, কারেন্ট এবং রেজিস্ট্যান্সের সম্পর্ক বোঝায়। ডিজাইন শেষ হওয়ার পর, সফটওয়্যার বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।
প্রোটোটাইপিং পদ্ধতি এবং ব্রেডবোর্ডের ব্যবহার
প্রোটোটাইপিং হলো সার্কিট ডিজাইন শেষ হওয়ার পর সেটি বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ। প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয় সার্কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে এবং যদি কোনো সমস্যা থাকে, তা সমাধান করতে।
প্রোটোটাইপ তৈরি করার জন্য সাধারণত ব্রেডবোর্ড ব্যবহার করা হয়। ব্রেডবোর্ড একটি প্লাস্টিকের প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিভিন্ন উপাদান সহজে স্থাপন করা যায়। এটি একটি অস্থায়ী সেটআপ, যেখানে কোনো সোল্ডারিং প্রয়োজন হয় না। ব্রেডবোর্ডের মাধ্যমে সার্কিটের সংযোগ পরিবর্তন করা যায় এবং সমস্যা থাকলে তা সহজে সমাধান করা সম্ভব।
প্রোটোটাইপিং পদ্ধতির সুবিধা:
- দ্রুত পরিবর্তন ও সংযোগের সুযোগ।
- সহজে বিভিন্ন উপাদানের পরীক্ষা।
- সমস্যা থাকলে তা সমাধানের ব্যবস্থা।
প্রোটোটাইপ সফলভাবে কাজ করলে সেটি স্থায়ীভাবে তৈরি করার জন্য প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড (PCB) ব্যবহার করা হয়, যেখানে উপাদানগুলো সোল্ডারিং করে স্থায়ী সংযোগ দেওয়া হয়।
সার্কিট ডিজাইন এবং প্রোটোটাইপিং একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া, যা সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। ব্রেডবোর্ডের মাধ্যমে প্রোটোটাইপ পরীক্ষা করা সহজ, যা পরবর্তী পর্যায়ে চূড়ান্ত সার্কিট তৈরিতে সহায়ক হয়।
শেষ কথা
সার্কিট ডিজাইন এবং প্রোটোটাইপিং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের উন্নয়ন এবং কার্যক্ষমতার মূলভিত্তি। সঠিক পরিকল্পনা ও পরীক্ষা ছাড়া কার্যকরী সার্কিট তৈরি সম্ভব নয়। প্রোটোটাইপিং প্রক্রিয়া সার্কিটের ত্রুটি দূর করে একটি স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকরী ইলেকট্রনিক সিস্টেম গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
লিমা খাতুন,সফট স্কিল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা, তেজগাঁও, ঢাকা, প্রকাশ-১১ নভেম্বর, ২০২৪,
<https://abhinoboschool.com/সফট স্কিল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা/>
সফট স্কিল সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের উপাদান কী কী?
ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের প্রধান উপাদানগুলি হল: শক্তি উৎস (ব্যাটারি বা পাওয়ার সাপ্লাই), কন্ডাকটর (তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবহন), সুইচ (সরবরাহ বন্ধ বা চালু করার জন্য), রেজিস্টর (প্রতিরোধক উপাদান) এবং লোড (বিদ্যুৎ ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি)।
শর্ট সার্কিট কী?
শর্ট সার্কিট হল এমন একটি অবস্থা যেখানে দুটি পরিবাহী উপাদান সরাসরি সংযুক্ত হয়ে যায়, যার ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয় এবং সার্কিটে ত্রুটি বা ক্ষতি হতে পারে।
সিরিজ সার্কিট এবং প্যারালাল সার্কিটের মধ্যে পার্থক্য কী?
সিরিজ সার্কিটে একটি যন্ত্রের সাথে অন্যটি সংযুক্ত থাকে, ফলে একটির ত্রুটি অন্যগুলোকেও প্রভাবিত করে। প্যারালাল সার্কিটে একাধিক পথ থাকে, ফলে একটি যন্ত্রের ত্রুটি অন্যগুলিকে প্রভাবিত করে না।