বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার কাপ্তাই হ্রদের তীরে অবস্থিত। ১৯৬২ সালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য অঞ্চলের অধীনে কাপ্তাইতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করতে যেমন পারদর্শী এছাড়া বিভিন্ন সেক্টরে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। আজ আমরা এই ইনিস্টিটিউটের সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ইতিহাস
১৯৬০ সালে, তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ও সুইডিশ সরকারের যৌথ প্রচেস্টায় সুইডিশ-পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি নামে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে,পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত সুইডিশ-পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) অধীনে ছিল এবং তখন প্রায় ৩০ জন ছাত্র অধ্যায়ন করতো এই ইনিস্টিটিউটে।
তাদেরকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে করাচিতে গিয়ে নিয়মিত পড়ালেখা করতে হত, যা একটি বাঙ্গালি পরিবারের জন্য খুবই ব্যয়বহুল ছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রাখা হয়।
পরবর্তিতে, ১৯৭০ সালে সুইডিশ সরকারের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, পরবর্তীকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এটি বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নামকরণ করে। এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রাখা হয়। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাস এলাকা প্রায় ৩০.৯৫ একর , ১৯৬০ সালে, “SENTAB” নামের একটি সুইডিশ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তাদের নির্মাণ কাজ শুরু করে এবং ১৯৬৫ সালে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়।
ইআইআইএন (EIIN) | ১৩৭০০৬ |
---|---|
ব্যবস্থাপনা | সরকারি |
শিক্ষার্থী ধরণ | সহশিক্ষা |
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য | |
বাংলায় | বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কাপ্তাই |
ইংরেজিতে (ব্লক লেটার) | BANGLADESH SWEDEN POLYTECHNIC INSTITUTE ,KAPTAITE |
স্থাপিত | ২০০৬ |
ফোন | ০১৭৩৮৯৩৩৭৮৩ |
মোবাইল | ০১৭১১৪৪৩১৭০ |
ই-মেইল | chapaipoly@gmail.com |
ওয়েবসাইট | www.dpi.gov.bd |
ক্যাম্পাস ভূমি | ৩ একর |
ঠিকানা | |
হোল্ডিং নম্বর/রোড | নতুন বাজার |
ডাকঘর | নতুন বাজার |
পোস্ট কোড | ৪৫৩৩ |
উপজেলা/থানা | কাপ্তাই উপজেলা |
জেলা | রাঙ্গামাটি |
বিভাগ | চট্টগ্রাম |
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
আমাদের লক্ষ্য:-
যুগোপযোগী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন।
আমাদের উদ্দেশ্য:-
- মানসম্মত কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।
- দেশ-বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত জনবল তৈরী।
- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অবদান নিশ্চিতকরণ।
পরিচালনা পর্ষদ
মন্ত্রণালয় ও বিভাগঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের “শিক্ষা মন্ত্রণালয়” এর “কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ” এর অধিনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
প্রশাসনিক পরিচালনাঃ “বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর” বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট -এর প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
একাডেমিক পরিচালনাঃ “বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড” বিএসপিআই এর একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
অধ্যক্ষ
মোহাম্মদ আবদুল মতিন হাওলাদার ৩০ মে ২০১৯ সালে উপাধ্যক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন এবং ২০ জুন ২০১৯ অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এর পূর্বে তিনি রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ১৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক-উড) পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি একই প্রতিষ্ঠানে ০৭ নভেম্বর ২০০৭ তারিখ হতে ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত ইনস্ট্রাক্টর (টেক-উড) এবং ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ তারিখ হতে ৩১ মে ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত চিফ ইনস্ট্রাক্টর (টেক-উড) পদে পদোন্নতিতে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে তিনি ০১ জুন ২০১৬ সাল হতে ০৪ নভেম্বর ২০১৮ সাল পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক এবং ০৫ নভেম্বর ২০১৮ সাল হতে ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ সাল পর্যন্ত সহকারি প্রকল্প পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি ২১ জানুয়ারী ২০১৯ সাল হতে ২৮মে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে উপাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর সুযোগ সুবিধা
বাংলাদেশের সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর শিক্ষার্থিদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে। শিক্ষার্থিদের পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় উন্নতির জন্য অনেক ধরনের সুযোগ রয়েছে।
লাইব্রেরি
বর্তমানে বাংলাদেশের সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর একটি সুন্দর এবং পৃথক লাইব্রেরী আছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের লাইব্রেরী থেকে বই ইস্যু করা হয়। লাইব্রেরীতে বাংলা এবং ইংরেজি ভাষার চর্চা করা হয়।
ওয়ার্কশপ এবং ল্যাবরেটরি
বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত এটিতেও ওয়ার্কশপ এবং কম্পিউটারের ল্যাব রয়েছে। একটা জাহাঙ্গীর হোস্টেলের নিচে এবং আরেকটি অটোমোবাইল ডিপার্টমেন্টের পিছনে। শিক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য এই ওয়ার্কশপ গুলি অনেক সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে এবং মোট কম্পিউটারের সংখ্যা ৯০ টি।
মাঠ ও উন্মক্ত স্থান
বাংলাদেশের অন্যান্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর মত এই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা এবং বিভিন্ন খেলাধুলা পরিচালনা করার জন্য রয়েছে একটি মাঠ। এই মাঠে ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ফুটবল ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের আউটডোর খেলাধুলা হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র
এই ইনস্ট্রিটে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে যেটিতে শিক্ষক এবং ছাত্ররা কোন প্রকার ত্রুটি হলে চিকিৎসা সহায়তা নিতে পারবে। প্রশাসনিক ভবনের নিচে বা প্রিন্সিপাল শিক্ষকের কক্ষের নিচে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র কেন্দ্রটি অবস্থিত।
আবাসিক হল
সাধারণত বাংলাদেশের সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ছেলেদের জন্য আপাতত কোন আবাসিক হল নেই তবে একটি মেয়েদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে ।
পলিটেকনিক ডাক বিভাগ
বর্তমানে বাংলাদেশের সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর কোন নিজস্ব পলিটেকনিক ডাক বিভাগ নেই।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান(মসজিদ)
বাংলাদেশের সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর একটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদে মুসলমান শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা নামাজ আদায় করে থাকে। এই মসজিদটি সুইডিশ হোস্টেলের পাশে অবস্থিত।
ক্যাম্পাসে মোট শিক্ষক এবং কর্মচারী
প্রিন্সিপাল | ১ জন |
চিফ ইনস্ট্রাক্টর | ৬ জন |
ইনস্ট্রাকটর | ১২ জন |
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর | ৭ জন |
ওয়ার্কশপ সুপার | ২ জন |
ফিজিক্যাল এডুকেশন ইনস্ট্রাক্টর | ১ জন |
ল্যাব এ্যসিসট্যান্ট | ৩ জন |
কর্মচারী | ৩৭ জন |
৩য় শ্রেণীর কর্মচারী | ১৪ জন |
৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী | ২৪ জন |
একাডেমিক কার্যক্রম
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অন্যান্য পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের মত সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও ডিপ্লোমা কোর্স চার বছর। ছয় মাসে এক একটি সেমিস্টার এবং মোট আটটি সেমিস্টারে ডিপ্লোমা কমপ্লিট হবে।
মোট সময়কাল: ৪ বছর (৮ টি সেমিস্টার)।
শিক্ষা পদ্ধতি: তত্ত্বীয় শ্রেণিকক্ষ, প্রযুক্তিগত ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশপ, এবং ইন্টার্নশিপ।
মূল্যায়ন: নিয়মিত পরীক্ষা, প্রজেক্ট, উপস্থাপনা, এবং অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে।
বিভাগঃ
- অটোমোবাইল টেকনোলজি
- সিভিল-উড টেকনোলজি
- কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
- কন্সট্রাকশন টেকনোলজি
- ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি
- মেকানিক্যাল টেকনোলজি
শর্ট কোর্স
এখন বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শর্ট কোর্স চালু নেই শুধু ডিপ্লোমার মাধ্যমগুলো কার্যরত আছে।
ছাত্র সংগঠন
বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের এক মাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তবে বর্তমানে ছাত্র আন্দলন এর পর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ছাত্র সংগঠন নেই।
ছাত্রাবাস
সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দুইটি ছাত্রাবাস, একটি সুইটস হোস্টেল ও আরেকটি জাহাঙ্গীর হোস্টেল রয়েছে তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে থাকার জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে।
সাধারণত আমরা জানি যে বাংলাদেশের প্রতিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর সম্পর্ক কিছু তথ্য আছে যেগুলো প্রায় একই থাকে বলা যায়, কারণ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় বলে। প্রত্যেকটি তথ্যগুলো আমরা ভেরিফাইড ওয়েবসাইট থেকে নিয়েছি এবং প্রত্যেকটি তথ্য গুলো আমাদের রিসার্চ করা যার ধরুন আপনি এখান থেকে খুব ফ্রেশ এবং আপডেট তথ্যগুলো জানতে পারবেন। সাধারণত আমাদের যে বিষয়গুলো বেশি জরুরি হয়ে থাকে যেমনঃ ভর্তির যোগ্যতা, কোর্সের সময়সীমা, শিক্ষা ব্যাবস্থা, পড়াশোনা খরচ, ছাত্রাবাস ইত্যাদি উল্লেখিত পয়েন্টগুলো ইনফরমেটিভ আর্টিকেলে দেওয়া হয়েছে।
মোহেবুল্লাহ হোসেন মুবিন, প্রকাশ ০৭, সেপ্টেম্বর, ২০২৪