ক্যারিয়ার প্রোফাইল

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার

লিখেছেন mstlima

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার” একটি সৃজনশীল ও চ্যালেঞ্জিং পেশা। এটি সিরামিক পণ্যের নকশা, গুণগত মান যাচাই, উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে গভীর জ্ঞান প্রদান করে। 

গ্র্যাজুয়েটরা দেশে ও বিদেশে সিরামিক ও গ্লাস কারখানা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পায়। এই পেশায় দক্ষতা অর্জন করলে দ্রুত পদোন্নতি এবং উচ্চ বেতন পাওয়া যায়, যা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়ক।

Table of Contents

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার পেশার ইতিহাস

বাংলাদেশে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার পেশার শুরু ১৯৫১ সালে বাংলাদেশে ইস্ট বেঙ্গল সিরামিকস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত সিরামিক পণ্য যেমন কাঁচ, পোরসেলিন এবং সিমেন্টের উৎপাদন ও ডিজাইন নিয়ে কাজ করে। 

এই পেশা বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে, যা অ্যারোস্পেস, সেমিকন্ডাক্টর এবং নিউক্লিয়ার শিল্পে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য দেশের প্রায় দুই শতাধিক কারখানায় কাজের সুযোগ রয়েছে, যা একটি উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা তৈরি করে।

এক নজরে ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার

সাধারন পদবীসিরামিক ইঞ্জিনিয়ার
বিভাগইঞ্জিনিয়ারিং
শিক্ষাগত যোগ্যতাডিপ্লোমা ডিগ্রি সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ
প্রতিষ্ঠানের ধরণসরকারি/বেসরকারি/প্রাইভেট কোম্পানি
ক্যারিয়ারে ধরণফুল টাইম
লেভেলএন্ট্রি/মিড/টপ
প্রধান দায়িত্বসমূহপণ্যের নকশা, কালার ম্যাচিং, গুণগত মান যাচাই, যুগোপযোগী নতুন পণ্য উদ্ভাবন।
টেকনিক্যাল স্কিলনলেজ অব সিরামিক ম্যাটারিয়াল, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস, মেশিন ও সরঞ্জাম পরিচালনা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং CAD সফটওয়্যার জ্ঞান।
সফট স্কিলকমিউনিকেশন, প্রবলেম সলভিং, টাইম ম্যানেজমেন্ট, ক্রিয়েটিভিটি এবং টিমওয়ার্ক।
বেতন কাঠামোইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। সরকারিতে ১০ম গ্রেড থেকে বেতন শুরু হয়।

টেবিলঃ ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার পেশা সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত তথ্য।

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

যে কোন শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এস.এস.সি/দাখিল/এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/দাখিল (ভোকেশনাল) /সমমানের পরীক্ষা অথবা ‘ও’ লেভেল এবং জিপিএ পদ্ধতি চালুর পূর্বের এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিম্নোক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
এস.এস.সি/সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ পদ্ধতিতে উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র: সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ২.০ সহ কমপক্ষে জিপিএ ৩.০।
ছাত্রী: সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ২.০ সহ কমপক্ষে জিপিএ ২.৫।

জিপিএ পদ্ধতির পূর্বের এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র/ছাত্রী: ন্যূনতম ২য় বিভাগ।

‘ও’ লেভেলে উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র/ছাত্রী: একটি বিষয়ে ‘সি’ গ্রেড এবং গণিতসহ অন্য যেকোন দুটি বিষয়ে ন্যূনতম ‘ডি’ গ্রেড থাকতে হবে।
যে কোন শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এস.এস.সি/ দাখিল /এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/ দাখিল (ভোকেশনাল) / সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কমপক্ষে জিপিএ ২.০ প্রাপ্ত।

অথবা ‘ও’ লেভেল এবং জিপিএ পদ্ধতি চালুর পূর্বে এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় যে কোন সালে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

যেসকল প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়

  • সরকারিঃ বাংলাদেশের প্রায় ১ টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়।
  • প্রাইভেটঃ একইভাবে বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়ে থাকে।

“ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার” ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ কেমন

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বাংলাদেশে প্রায় ২০০টিরও বেশি সিরামিক ও গ্লাস কারখানা রয়েছে, যেখানে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বাড়ছে। শুরুতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করে, দক্ষতা প্রদর্শন করলে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার বা প্রোডাকশন ম্যানেজার পদে দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব। 

এছাড়াও, আন্তর্জাতিক বাজারেও সিরামিক পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, যা বিদেশে চাকরির সুযোগ উন্মুক্ত করছে। বাংলাদেশে ২০২৩ সালে সিরামিক শিল্পের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫%, যা দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্দেশ করে। 

নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং রিসার্চের মাধ্যমে এই পেশায় দ্রুত উন্নতি করা সম্ভব, যা একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারকে বিশ্বব্যাপী উচ্চস্থানে পৌঁছে দিতে পারে।

সমাজে ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের সম্মান কেমন

সমাজে একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের সম্মান দিন দিন বাড়ছে। সিরামিক শিল্পের দ্রুত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এই পেশার গুরুত্বও বাড়ছে। একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার কাঁচ, টাইলস, এবং সিরামিক পণ্যের উন্নত মান নিশ্চিত করে শিল্পের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই পেশা সৃজনশীলতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রয়োজন, যা সমাজে ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ায়। বিশেষ করে, সিরামিক পণ্যের চাহিদা এবং বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির ফলে এই পেশার সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে কারখানার উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা তাদের সমাজে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষা

পাবলিক ইউনিভার্সিটি (সরকারি):

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)। যেখানে শুধু মাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে।

তবে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী নির্মানাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি এবং ঠাকুরগাঁও) এর সকল আসনে ডুয়েট এর আদলে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীরা শতভাগ ভর্তির সুযোগ পাবে। এছাড়া সুযোগ রয়েছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST) এবং এসোসিয়েট মেম্বার অফ দা ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (AIME)-তে।

বেসরকারি ইউনিভার্সিটি:

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা ইউনিভার্সিটি ব্যথিত। অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, এফোর্টেবল টিউশন ফি, সন্ধ্যাকালীন ক্লাস এবং চাকরি করে পড়াশোনার সুযোগ।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা:

ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা চীন, রাশিয়া, ভারত সহ অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। যেমন, ইউকে (UK), ইউএসএ (USA), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ড (Netherlands), রোমানিয়া (Romania), ইতালি (Italy), পর্তুগাল (Portugal), ফ্রান্স (Franch), জাপান (Japan), জার্মানি (Germany), পোল্যান্ড (Poland) সহ ইউরোপের এবং পশ্চিমের প্রায় অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রতিটি দেশের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুল-ফিল করতে হয়। উলেক্ষ্য যে, অসাধ্য কিছু না, চাইলেই সম্ভব। অনেকে পড়াশোনার উদেশ্য বাহিরে গিয়ে, পড়াশোনা শেষ করে বেশ ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রথা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য না। ডিপ্লোমাতে অধ্যায়নরত প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য একই রুলস বিদ্যামান।

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়

একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে অবশ্যই শেখার আগ্রহ রাখতে হবে এবং সর্বক্ষেত্রে নিজেকে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারদের মতোই উন্নত করার মানসিকতা ধারণ করতে হবে। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সবাই নিজেকে প্রতিনিয়ত আপগ্রেড করছে এবং নতুন প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নিচ্ছে। সেই গতির সাথে তাল মিলিয়ে বাজারে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই নিজেকে সময়ের সাথে মেধা ও দক্ষতায় উন্নত করতে হবে। নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার শেখার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের মতো সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। অন্যান্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের মতো একজন ডিপ্লোমা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকেও তার কর্মক্ষেত্রে যেসব দক্ষতা অর্জন করতে হবে:

টেকনিক্যাল স্কিলঃ

  • নলেজ অব সিরামিক ম্যাটারিয়াল:
    • কাঁচামালের বৈশিষ্ট্য: কাঁচামাল যেমন ক্লে, সিলিকা, ফিল্ডস্পার ইত্যাদি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা।
    • উপাদানের মিশ্রণ ও গঠন: সিরামিক প্রোডাক্ট তৈরির জন্য বিভিন্ন উপাদানের সঠিক মিশ্রণ ও কম্পাউন্ড তৈরির দক্ষতা।
  • ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস:
    • মোল্ডিং (Molding): সিরামিক সামগ্রীর সঠিক আকার এবং গঠন তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের মোল্ডিং প্রক্রিয়া যেমন প্রেস মোল্ডিং, কাস্টিং ইত্যাদি পরিচালনা করা।
    • গ্লেজিং (Glazing): সিরামিক সামগ্রীতে সঠিক গ্লেজ প্রয়োগ করা যা পণ্যকে আকর্ষণীয় এবং টেকসই করে তোলে।
  • মেশিন ও সরঞ্জাম পরিচালনা:
    • কিল্ন (Kiln) অপারেশন: কিল্ন পরিচালনা, এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং ফায়ারিং প্রক্রিয়ার মান নিয়ন্ত্রণ।
    • মিক্সার ও ব্লেন্ডার: কাঁচামাল ও কেমিক্যাল সঠিক মাপে মিশ্রণ করার মেশিন পরিচালনা।
    • হাইড্রোলিক প্রেস মেশিন: সিরামিক সামগ্রীর বিভিন্ন আকৃতি এবং আকার তৈরিতে হাইড্রোলিক প্রেস মেশিনের ব্যবহার।
  • কোয়ালিটি কন্ট্রোল:
    • গুণমান পরিমাপ: প্রোডাক্টের গুণগত মান নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন টেস্ট করা যেমন শক্তি পরীক্ষা (Strength Test), পানি শোষণ পরীক্ষা (Water Absorption Test)।
    • ডিফেক্ট আইডেন্টিফিকেশন: প্রোডাক্টে ক্র্যাক, ফোটা, বা অন্যান্য ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধন করা।
  • রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট (R&D):
    • নতুন প্রোডাক্ট ডিজাইন: নতুন ধরনের সিরামিক প্রোডাক্ট তৈরি করার জন্য গবেষণা এবং উন্নয়ন কাজ করা।
    • উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নয়ন: উৎপাদনের প্রক্রিয়া আরো উন্নত এবং সময় সাশ্রয়ী করার জন্য নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন।
  • CAD সফটওয়্যার জ্ঞান:
    • AutoCAD বা অন্যান্য CAD সফটওয়্যার: সিরামিক প্রোডাক্ট ডিজাইন এবং উন্নয়নে CAD সফটওয়্যার ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করা।
  • ডাটা অ্যানালাইসিস ও রিপোর্টিং:
    • প্রোডাকশন ডেটা বিশ্লেষণ এবং উৎপাদনের কার্যকারিতা যাচাই করা।
    • গুণমান ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত রিপোর্ট তৈরি করা।

সফট স্কিলঃ

  • কমিউনিকেশনঃ গ্রাহক, সহকর্মী এবং সরবরাহকারীদের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারা।
  • প্রবলেম সলভিংঃ জটিল সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করে সমাধান বের করতে পারা।
  • টাইম ম্যানেজমেন্টঃপ্রকল্পগুলি সময়মতো সম্পন্ন করার জন্য কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারা।
  • টিমওয়ার্কঃ অন্যদের সাথে সহযোগিতা করে কাজ করতে পারা।
  • ক্রিয়েটিভিটিঃ নতুন ডিজাইন এবং উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করতে পারা।

সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির ক্ষেত্র সমূহ

সরকারিঃ

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়াররা সরকারি সেক্টরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন। তাদের কাজের ক্ষেত্রগুলো হলো:

  • বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (BCIC)
  • বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR)
  • বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (BSTI)
  • পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (PWD)
  • সরকারি টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
  • বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPC)
  • সরকারী গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র

বেসরকারিঃ

বেসরকারি সেক্টরেও ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য প্রচুর চাকরির সুযোগ রয়েছে। কাজের ক্ষেত্রগুলো হলো:

  • সিরামিক এবং গ্লাস উৎপাদন কারখানা (নাসির গ্লাস, শাইনপুকুর সিরামিকস, মুন্নু সিরামিকস)
  • নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন কোম্পানি
  • গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান
  • সিরামিক প্রোডাকশন ও প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি
  • প্রাইভেট টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
  • টাইলস, স্যানিটারি ও টেবিলওয়্যার নির্মাণ কারখানা
  • বিদেশে সিরামিক এবং গ্লাস উৎপাদন শিল্পে কাজের সুযোগ (ইউরোপ, আমেরিকা)।

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের কাজ কী

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের কাজ অত্যন্ত রোমাঞ্চকর ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। তারা প্রাচীন শিল্প ও আধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রণে কাজ করেন। এখানে তাদের মূল কাজগুলি উল্লেখ করা হলো:

  • উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি: নতুন ও আকর্ষণীয় সিরামিক পণ্য ডিজাইন করা।
  • উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নয়ন: দক্ষতা বাড়ানো ও খরচ কমানোর জন্য উৎপাদন পদ্ধতি উন্নত করা।
  • গুণমান নিয়ন্ত্রণ: পণ্যের মান নিশ্চিত করতে পরীক্ষা ও মানদণ্ড স্থাপন করা।
  • গবেষণা ও উন্নয়ন: নতুন সিরামিক উপাদান ও প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা।
  • পরিবেশ বান্ধব সমাধান: টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব সিরামিক পণ্য ও প্রক্রিয়া তৈরি করা।
  • প্রকল্প ব্যবস্থাপনা: সিরামিক সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি পরিচালনা ও সমন্বয় করা।

এভাবে, সিরামিক ইঞ্জিনিয়াররা শিল্প ও বিজ্ঞানের সংমিশ্রণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও সুন্দর ও সুবিধাজনক করে তোলেন।

বেতন কাঠামো

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি দশম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করলে তার মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ করে বেতন বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯,৬০০ টাকার বাড়িভাড়া ভাতা এবং ১,৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। ফলে মোট বেতন-ভাতাদি দাঁড়ায় ২৭,১০০ টাকা। এই বেতন কাঠামো একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সাথে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার ট্রেইনি অর্থাৎ ইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় সঠিক ডেটা নিয়ে আসা সম্ভব না। চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

ফিউচার ট্রেন্ড ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং

  • স্মার্ট সিরামিক: আপনার বাড়ি হবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী, উন্নতমানের টাইলস, আলো-প্রতিফলনকারী ছাদ – সবই সম্ভব।
  • বায়োসিরামিক: প্রকৃতির সাথে হাত মিলিয়ে চলবে প্রযুক্তি। জৈব-অনুকূল উপাদানে তৈরি সিরামিক আসবাবপত্র দেখবেন ঘরে-বাইরে।
  • নানো-সিরামিক: অতি ক্ষুদ্র, কিন্তু শক্তিশালী, মহাকাশযান থেকে স্মার্টফোন, সবখানেই ব্যবহৃত হবে।
  • পুনর্ব্যবহারযোগ্য সিরামিক: পুরনো সিরামিক পণ্য পুনর্ব্যবহার করে তৈরি হবে নতুন জিনিস।
  • চিকিৎসা সিরামিক: আপনার শরীরের অংশ হয়ে উঠবে সিরামিক! কৃত্রিম হাড় থেকে দাঁতের ইমপ্ল্যান্ট, সবই সিরামিকের।
  • 3D প্রিন্টেড সিরামিক: আপনার কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেবে। জটিল আকৃতির সিরামিক পণ্য তৈরি হবে মুহূর্তে।
  • এনার্জি সিরামিক: বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সংরক্ষণে নতুন যুগ আনবে। সৌর প্যানেল থেকে ব্যাটারি, সবই সিরামিকের।
  • উচ্চ-প্রযুক্তির সিরামিক: এয়ারক্রাফট ইঞ্জিন থেকে কম্পিউটার চিপ, সবখানেই ব্যবহৃত হবে সিরামিক।

শেষ কথা

সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং একটি উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীল পেশা, যা উচ্চ প্রযুক্তি এবং শিল্পের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে। এটি চ্যালেঞ্জিং হলেও দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সমন্বয়ে এই পেশায় দ্রুত উন্নতি এবং উচ্চ সামাজিক মর্যাদা অর্জন করা সম্ভব।


উল্লেখ্য যে, প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর সম্পর্কে কিছু তথ্য একই থাকে। যার প্রধান কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরগুলো একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই নিচের উল্লেখিত পয়েন্টগুলো একটি মাত্র ইনফরমেটিভ আর্টিকেলে রাখা হয়েছে যেন, যে কেউ খুব সহজে তথ্যগুলো পেতে পারে এবং একটি আর্টিকেলে বিস্তারিত পেয়ে যায়। যেমন পেশার সারসংক্ষেপ,  ইতিহাস, পড়ার যোগ্যতা, উচ্চ শিক্ষা, ক্যারিয়ার, বেতন কাঠামো, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি।

লিমা খাতুন, ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার, তেজগাঁও, ঢাকা, প্রকাশ-২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,
<https://abhinoboschool.com/ডিপ্লোমা-ইন-সিরামিক-ইঞ্জিনিয়ার/>

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর

সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের কি কি টেকনিক্যাল স্কিল থাকা দরকার?

নলেজ অব সিরামিক ম্যাটারিয়াল, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস, মেশিন ও সরঞ্জাম পরিচালনা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং CAD সফটওয়্যার সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো কি?

বাংলাদেশ সরকারের ৮ম পে-স্কেল অনুযায়ী একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার ১০ম গ্রেডে ১৬০০০-৩৮৬৪০ টাকা মূল বেতনে নিয়োগ পায় যা সর্বসাকুল্যে ২৭১০০-৬৫০০০ টাকা পর্যন্ত হয়।

ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার কোথায় কাজ করে থাকে?

সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত, সরকারি বিধিবদ্ধ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে।

আর্টিকেল রিভিউ
Sending
User Review
92% (2 votes)
শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে

লেখক সম্পর্কে

mstlima

নিউজ
চাকরি
Home
Question
Search