ক্যারিয়ার প্রোফাইল

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার

লিখেছেন mstlima

জমি-জমা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্যই মূলত “ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার” এর সূত্রপাত। আদিমকালে রাজারা তাদের রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণ করার সময় বিভিন্ন পদবীর কর্মকর্তারা রাজ্যের সীমানা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। বর্তমানে রাজা-প্রজা না থাকলেও সাধারণ মানুষ নিজের জায়গা সম্পত্তিতে নিজেদের ভাগ টুকু আলাদা করে নিতে চান। ঠিক তখনই সার্ভেয়ারদের প্রয়োজন হয়। একজন সার্ভেয়ার গ্রাম ও শহরে বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব, মেশিন ব্যবহার করে জমি বা জায়গার সীমানা নির্ধারণ করেন।

Table of Contents

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার এর সারসংক্ষেপ

প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই জীবনে আলাদা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। কেউ কেউ স্রোতের বিপরীতে ভিন্ন সেক্টরে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চায়। তাদের মধ্যে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার অন্যতম। তিন মাত্রিক বিন্দুর মধ্যে স্থানিক দূরত্ব বা কোণের পরিমাপকে সমীক্ষা বলে। ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের মূল লক্ষ্য হলো একজন শিক্ষার্থীকে ভূমি সমীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান সরবরাহ করে নিখুঁত সার্ভের জন্য প্রস্তুত করা। ভূমি সমীক্ষা একটি বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। সাধারণ মানুষ ভূমি জরিপ করতে গেলে তাদের সমীক্ষায় নানান জটিলতার সৃষ্টি হয়, যা একজন ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার ব্যবহারিক ভাবে শিখে থাকেন।

একজন সার্ভেয়ার শুধু জমি জরিপে সীমাবদ্ধ থাকেন না, সমুদ্রের তলদেশের ম্যাপিং, রাস্তার ল্যান্ডস্কেপিং, দেশের সীমানা নির্ধারণ, সমুদ্র সীমা নির্ধারণ, খনি সংস্থা, জ্বালানি অনুসন্ধান ছাড়াও বড় প্রজেক্টগুলোতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে বিশাল সাপোর্টিভ রোলে কাজ করেন।

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার পেশার ইতিহাস

সেই আদিম যুগ থেকেই সার্ভেয়াররা আমাদের পূর্ববর্তী মানুষদের কে তাদের ভূখণ্ড পরিমাপ করে দিচ্ছেন। সার্ভেয়ারদের সেসব জরিপই মূলত আমাদের বর্তমান সড়ক ও নগরগুলোর ভিত্তি স্থাপন করেছে।

Stonehenge প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিলো। এটা প্রাচীনকালের সার্ভেয়িং এর জ্বলন্ত উদাহরণ।  মিশরের পিরামিড খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ অব্দে নির্মাণ করা হয়েছিলো। পিরামিডের নিখুঁত স্কয়ার, উত্তর-দক্ষিণ স্থিতি-বোধই নির্দেশ করে তৎকালীন সার্ভেয়াররা কতোটা নিখুঁত ছিলেন।বাংলাদেশে সার্ভেয়িং এর শুরু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে। তৎকালীন অখন্ড ভারতে বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের অধীনে ১৭৬৭ সালে প্রথম সার্ভে করা হয়। ১৮৭৬ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় সর্বপ্রথম ঢাকা সার্ভে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা পরবর্তীতে বর্ধিত ও নাম পরিবর্তন করে আহসান উল্লাহ স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং রাখা হয়।

এক নজরে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার

সাধারন পদবীসার্ভেয়ার
বিভাগকনস্ট্রাকশান এন্ড ডেভেলপমেন্ট
শিক্ষাগত যোগ্যতাডিপ্লোমা ডিগ্রি সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ
প্রতিষ্ঠানের ধরণসরকারি/বেসরকারি/প্রাইভেট কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরণফুল টাইম
লেভেলএন্ট্রি/মিড/টপ
প্রধান দায়িত্বসমূহভূমি জরিপ, নকশা তৈরি, ডিজিটাল সার্ভে যন্ত্রপাতি পরিচালনা করা।
টেকনিক্যাল স্কিলসার্ভেয়িং ইন্সট্রুমেন্ট পরিচালনা, অটোক্যাড (AutoCAD) এবং ডিজিটাল ম্যাপিং, জমি পরিমাপ এবং ম্যাপিং, ডাটা কালেকশন ও এনালাইসিস এবং জমির আইনি প্রক্রিয়া এবং রেগুলেশন।
সফট স্কিলকমিউনিকেশন, প্রবলেম সলভিং, লিডারশীপ, টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং টিমওয়ার্ক।
বেতন কাঠামোইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। সরকারিতে ১০ম গ্রেড থেকে বেতন শুরু হয়।

টেবিলঃ ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার পেশা সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত তথ্য।

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

যে কোন শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এস.এস.সি/দাখিল/এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/দাখিল (ভোকেশনাল) /সমমানের পরীক্ষা অথবা ‘ও’ লেভেল এবং জিপিএ পদ্ধতি চালুর পূর্বের এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিম্নোক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
এস.এস.সি/সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ পদ্ধতিতে উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র: সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ২.০ সহ কমপক্ষে জিপিএ ৩.০।
ছাত্রী: সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ২.০ সহ কমপক্ষে জিপিএ ২.৫।

জিপিএ পদ্ধতির পূর্বের এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র/ছাত্রী: ন্যূনতম ২য় বিভাগ।

‘ও’ লেভেলে উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র/ছাত্রী: একটি বিষয়ে ‘সি’ গ্রেড এবং গণিতসহ অন্য যেকোন দুটি বিষয়ে ন্যূনতম ‘ডি’ গ্রেড থাকতে হবে।
যে কোন শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এস.এস.সি/ দাখিল /এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/ দাখিল (ভোকেশনাল) / সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কমপক্ষে জিপিএ ২.০ প্রাপ্ত।

অথবা ‘ও’ লেভেল এবং জিপিএ পদ্ধতি চালুর পূর্বে এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় যে কোন সালে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

যেসকল প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়

  • সরকারিঃ বাংলাদেশের প্রায় ২ টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়।
  • প্রাইভেটঃ একইভাবে বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়ে থাকে।

“ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার” ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ কেমন

সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার আমাদের দেশে চিন্তা মুক্ত। প্রতিনিয়ত আমাদের দেশে হাজার হাজার ভবন নির্মাণ হচ্ছে, নানা অর্থনৈতিক প্রকল্প চলতেছে, এসব ক্ষেত্রে জরিপ ও ম্যাপিং এর জন্য সার্ভেয়ারদের প্রয়োজন হয়৷ প্রযুক্তির পরিবর্তনের কারণে সার্ভেয়িং এর পরিমাণ এখন অনেকাংশেই বেড়েছে। ম্যানুয়াল পৃথিবী সময়ের পরিবর্তিত হয়ে আধুনিক পৃথিবীতে পরিণত হচ্ছে। এতে মানুষের মধ্যে কোনো কাজ আরও নিখুঁতভাবে পরিচালনা করার তাগিদ জন্ম হয়েছে। ম্যাপিং ম্যানুয়ালি করা একটি জটিল প্রক্রিয়া তাই এই কাজে সার্ভে ইঞ্জিনিয়াদের প্রয়োজন হয়।

কর্মসংস্থানের জন্য ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার সরকারি অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি নিতে পারেন। খনির সংস্থাগুলোতেও সার্ভেয়ারের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের কয়লা খনিতে বা অন্যান্য প্রাকৃতিক খনিতে সার্ভেয়ারের প্রয়োজন হয়। এছাড়াও জনসাধারণের জমি-জমা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে সরকারি ভূমি অফিসে সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়া হয়।

জনসেবা মূলক কাজ যেমন হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি নির্মাণ কাজেও সার্ভেয়ারের প্রয়োজন হয়। সরকারি ইপিজেড বা সকল মন্ত্রণালয়েই সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়া হয়। ভূমি, সড়ক, প্রতিরক্ষা, জনস্বাস্থ্য, খাদ্য, পাঠ ও বস্ত্র,  শিক্ষা, গণপূর্ত, পরিবেশ, পানি ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয়েও ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ কোম্পানির অবকাঠামো নির্মাণে সার্ভেয়ারদের প্রয়োজন হয়৷ বড় বড় ডেভেলপার কোম্পানিতে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। রাস্তাঘাট, হাইওয়ে, রেলওয়েতেও সার্ভেয়ারদের ভালো চাকরির সুযোগ রয়েছে।

দেশীয় কনস্ট্রাকশান কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি গুলোতে সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়া হয়। আমাদের দেশে কাজ করতে আসা বিভিন্ন বৈদেশিক কোম্পানিগুলোতেও সার্ভেয়ার নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ আছে কি না তার উপর জোর দেয়া হয়, আর এক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ একজন ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার চাইলে ফ্রীল্যান্স কাজ করতে পারেন। তার ডিগ্রি ব্যবহার করে বিভিন্ন জমি-জমা পরিমাপ করে মাসে ভালো ইনকাম করতে পারেন।

সমাজে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারের সম্মান কেমন

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়াররা সরকারি মন্ত্রণালয়ে চাকরি করে থাকেন। সরকারি চাকুরীজীবিদের আমাদের সমাজে আলাদা কদর রয়েছে। আর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বা বড় বড় সরকারি প্রজেক্টে কাজ করার পর, একজন ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার মানুষের কাছ থেকে সম্মান ও মর্যাদা দুটোই পেয়ে থাকেন।

আমাদের দেশে জায়গা-জমি সংক্রান্ত জটিলতা সবসময়ই লেগে থাকে। এসব দ্বন্দ্বের অবসান সহজে হয় না, এজন্য জায়গা জমি নিয়ে গ্রাম বা শহরে মানুষকে নানান ঝামেলা পোহাতে হয়। একজন সার্ভেয়ারই জমির নিখুঁতভাবে ম্যাপিং এর মাধ্যমে এসব বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেন। এজন্য তাদের সম্মান মানুষের কাছে অনন্য।কর্মক্ষেত্রেও সার্ভে ইঞ্জিনিয়াররা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ও অন্যান্য কর্মীদের সাথে দলগত কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন প্রাইভেট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বা মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ে তাদের কাজ করতে হয়, এতে শ্রম ও মেধা উভয়ই বেশী প্রয়োজন হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমাধানে আসতে হয়, এজন্য কর্মক্ষেত্রেও তাদের যথেষ্ট সম্মান প্রদান করা হয়।

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষা

পাবলিক ইউনিভার্সিটি (সরকারি):

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)। যেখানে শুধু মাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে।

তবে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী নির্মানাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি এবং ঠাকুরগাঁও) এর সকল আসনে ডুয়েট এর আদলে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীরা শতভাগ ভর্তির সুযোগ পাবে। এছাড়া সুযোগ রয়েছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST) এবং এসোসিয়েট মেম্বার অফ দা ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (AIME)-তে।

বেসরকারি ইউনিভার্সিটি:

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা ইউনিভার্সিটি ব্যতিত। অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, এফোর্টেবল টিউশন ফি, সন্ধ্যাকালীন ক্লাস এবং চাকরি করে পড়াশোনার সুযোগ।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা:

ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা চীন, রাশিয়া, ভারত সহ অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। যেমন, ইউকে (UK), ইউএসএ (USA), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ড (Netherlands), রোমানিয়া (Romania), ইতালি (Italy), পর্তুগাল (Portugal), ফ্রান্স (Franch), জাপান (Japan), জার্মানি (Germany), পোল্যান্ড (Poland) সহ ইউরোপের এবং পশ্চিমের প্রায় অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রতিটি দেশের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুল-ফিল করতে হয়। উলেক্ষ্য যে, অসাধ্য কিছু না, চাইলেই সম্ভব। অনেকে পড়াশোনার উদেশ্য বাহিরে গিয়ে, পড়াশোনা শেষ করে বেশ ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রথা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য না। ডিপ্লোমাতে অধ্যায়নরত প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য একই রুলস বিদ্যামান।

একজন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়

টেকনিক্যাল স্কিলঃ

  • সার্ভেয়িং ইন্সট্রুমেন্ট পরিচালনা:
    • টোটাল স্টেশন (Total Station): জমির নির্ভুল ম্যাপ তৈরি এবং দূরত্ব পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত।
    • জিপিএস (GPS): নির্দিষ্ট স্থান বা পয়েন্টের কো-অর্ডিনেট সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে সহায়ক।
    • লেভেলিং ইন্সট্রুমেন্ট: উচ্চতা বা ঢাল পরিমাপের জন্য।
    • থিওডোলাইট (Theodolite): কোণ নির্ধারণ ও ম্যাপিং এর জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র।
  • অটোক্যাড (AutoCAD) এবং ডিজিটাল ম্যাপিং:
    • অটোক্যাড সফটওয়্যার ব্যবহার করে জমির ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি।
    • জিআইএস (GIS) সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ভূ-তাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ।
  • জমি পরিমাপ এবং ম্যাপিং:
    • জমির ক্ষেত্রফল, সীমানা এবং আকার সঠিকভাবে নির্ধারণ করা।
    • প্ল্যান ও ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে জমির ব্যবহার উপযোগিতা নির্ধারণ করা।
  • ডাটা কালেকশন ও এনালাইসিস:
    • সার্ভে ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে সংগৃহীত ডাটা সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা।
    • কম্পিউটারে ডাটা ইম্পোর্ট করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও রিপোর্ট তৈরি।
  • জমির আইনি প্রক্রিয়া এবং রেগুলেশন:
    • জমির মাপজোক এবং নিবন্ধনের আইন ও নিয়ম সম্পর্কে ধারণা থাকা।
    • জমির দলিলপত্র, ল্যান্ড টাইটেল ও অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান রাখা।

সফট স্কিলঃ

  • কমিউনিকেশনঃ প্রকল্প দলের সদস্য, ক্লায়েন্ট এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে সঠিক এবং সুস্পষ্টভাবে তথ্য বিনিময়।
  • প্রবলেম সলভিংঃ মাঠের বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দ্রুত এবং কার্যকর সমাধান বের করা।
  • লিডারশীপঃ ছোট দল বা সাব-ইঞ্জিনিয়ারদের নেতৃত্ব দেওয়া। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা।
  • টাইম ম্যানেজমেন্টঃ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হওয়া। প্রজেক্টের বিভিন্ন কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করে সময়মত তা সম্পন্ন করা।
  • টিমওয়ার্কঃ সহযোগিতামূলক মনোভাব রেখে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি, এবং শ্রমিকদের সাথে কাজ করা।

সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির ক্ষেত্র সমূহ

সরকারিঃ

  • জেলা ও ভূমি অফিস (Land Office)
  • পানি উন্নয়ন বোর্ড (Bangladesh Water Development Board – BWDB)
  • সড়ক ও জনপথ বিভাগ (Roads and Highways Department – RHD)
  • বাংলাদেশ রেলওয়ে
  • সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা
  • বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (Bangladesh Power Development Board – BPDB)
  • পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (PWD)
  • জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ
  • বন বিভাগ (Forest Department)

বেসরকারিঃ

  • বেসরকারি নির্মাণ কোম্পানি (Construction Companies)
  • ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্সি ফার্ম (Engineering Consultancy Firms)
  • রিয়েল এস্টেট কোম্পানি
  • তেল ও গ্যাস কোম্পানি
  • টেলিযোগাযোগ কোম্পানি
  • প্রাইভেট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টস
  • ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি
  • নতুন প্রযুক্তি এবং জিও-ইনফরমেশন সিস্টেম (GIS) কোম্পানি

একজন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারের কাজ কী

  • ভূমির জরিপ ও ম্যাপিং করা।
  • প্রজেক্টে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত কাজের একটি আনুমানিক ক্যালকুশন তৈরি করা।
  • নির্মাণাধীন যেকোনো প্রজেক্টের নকশা সম্পাদনা করা ও প্রজেক্টটি কিভাবে হবে তার ধারণা দেয়া।
  • একটি প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রীর মোট হিসাব ঠিক রাখা।
  • প্রজেক্ট চলাকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় নির্মাণ সামগ্রীর হিসাব রেগুলার পর্যালোচনা করা
  • প্রজেক্টে নিযুক্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা।

বেতন কাঠামো

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি দশম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করলে তার মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ করে বেতন বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯,৬০০ টাকার বাড়িভাড়া ভাতা এবং ১,৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। ফলে মোট বেতন-ভাতাদি দাঁড়ায় ২৭,১০০ টাকা। এই বেতন কাঠামো একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সাথে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার ট্রেইনি অর্থাৎ ইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় সঠিক ডেটা নিয়ে আসা সম্ভব না। চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

ফিউচার ট্রেন্ড ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং

সময়ের সাথে পৃথিবীর পরিবর্তন, পরিবর্ধন হচ্ছে। আধুনিক দ্রুতগতির পৃথিবীতে সবকিছু এখন মানুষের জন্য সহজ হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও হবে। একজন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারের পূর্বে কাঠখড় পুড়িয়ে যে কাজ করা লাগতো এখন তা মেশিনের মাধ্যমে সহজসাধ্য হয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন নতুন মেশিন উদ্ভাবনের মাধ্যমে আরও নিখুঁত ও পরিপক্ক ভাবে সার্ভেয়িং করা সম্ভব হবে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বাড়বে, ফলে সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের শ্রম কমবে ও সহজেই ম্যাপিং, ল্যান্ডস্কেপিং ও জরিপ করতে পারবে।

দিন দিন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের পরিধি বাড়বে৷ বিভিন্ন প্রজেক্ট নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে অন্যান্য লোকবলের সাথে সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদেরও প্রয়োজন হবে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রসার ঘটবে, এতে বিভিন্ন ক্ষেত্র তৈরী হবে, নতুন নতুন ইনভেস্টমেন্ট আসবে, ব্যবসার পরিধি বাড়বে। মানুষের জীবনমান উন্নত হলে নির্মাণ কাজ বা নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে এতে সার্ভেয়ারদের বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।

শেষ কথা

বাংলাদেশে মাত্র দুটি সরকারি ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পড়ানো হয়। বাংলাদেশের কুমিল্লা ও রাজশাহীতে অবস্থিত দুটি ইনিস্টিউটে প্রতিবছর মাত্র ২০০ বা তার অধিক শিক্ষার্থী এই ডিসিপ্লিনে ডিপ্লোমা করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার একটি ভিন্নধর্মী ক্যারিয়ার। এ পেশায় গতানুগতিক অন্যান্য ডিসিপ্লিনের মতো এতো প্রতিযোগিতাও থাকে না৷ নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীরা দেশের মাটিতেই একটি সুশৃঙ্খল ও শান্তির ক্যারিয়ারের জন্য ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার কোর্সে ভর্তি হন।

সার্ভেয়ার হয়ে পাশ করার পর সরকারি সেক্টরের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরেও সার্ভেয়ার হয়ে যোগদান করার সুযোগ থাকে। একজন সার্ভেয়ার সময়ের সাথে অভিজ্ঞ হয়ে প্রতিমাসে ভালো আয়ও করে থাকেন। তখন অনেক বৈদেশিক কোম্পানিতেও চাকরি করার সুযোগ থাকে। কেউ কেউ আবার নিজস্ব ফার্ম দিয়ে থাকেন, অনেকক্ষেত্রে পরবর্তীতে কন্ট্রাক্টর হয়ে যান। তাই পরিশেষে বলা যায়, ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার করার পর আমাদের দেশে ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।


উল্লেখ্য যে, প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর সম্পর্কে কিছু তথ্য একই থাকে। যার প্রধান কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরগুলো একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই নিচের উল্লেখিত পয়েন্টগুলো একটি মাত্র ইনফরমেটিভ আর্টিকেলে রাখা হয়েছে যেন, যে কেউ খুব সহজে তথ্যগুলো পেতে পারে এবং একটি আর্টিকেলে বিস্তারিত পেয়ে যায়। যেমন পেশার সারসংক্ষেপ,  ইতিহাস, পড়ার যোগ্যতা, উচ্চ শিক্ষা, ক্যারিয়ার, বেতন কাঠামো, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি।

লিমা খাতুন, ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার, তেজগাঁও, ঢাকা, প্রকাশ-২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,
<https://abhinoboschool.com/ডিপ্লোমা-ইন-সার্ভে-ইঞ্জিনিয়ার/>

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার এর গ্রেড কত?

সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী একজন ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার যে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০ম গ্রেডে বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নন ক্যাডার গেজেটেড অফিসার হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার যোগ্যতা কি?

যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে বিষয়ে ডিগ্রি থাকলে ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মক্ষেত্র শুরু করা যায়।

ডিপ্লোমা ইন সার্ভে ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কত?

সরকারি প্রতিষ্ঠানে শুরুতে মূল বেতন ১৬০০০ টাকা যা সর্বসাকুল্যে ২৭১০০ টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার ভিত্তিতে ১৫,০০০-৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন হয়ে থাকে।

শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে

লেখক সম্পর্কে

mstlima

নিউজ
চাকরি
Home
Question
Search