ক্যারিয়ার প্রোফাইল

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং
লিখেছেন abhinoboschool

ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং (ডিপ্লোমা) হল টেক্সটাইল শিল্পের একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র যেখানে সুতা উৎপাদনের প্রযুক্তি, প্রক্রিয়া ও মান নিয়ন্ত্রণ শেখানো হয়। ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং এই কোর্সে ফাইবার থেকে সুতা তৈরির বিভিন্ন ধাপ, মেশিন ব্যবহারের কৌশল, এবং উৎপাদিত সুতার গুণগত মান বৃদ্ধির পদ্ধতি শেখানো হয়। ডিপ্লোমা ধারীরা টেক্সটাইল কারখানায় সুতা উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার সারক্ষেপ 

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হল পেশাদার প্রকৌশলের একটি শাখা যা প্রকৌশলের অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন যান্ত্রিক, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক এবং শিল্প প্রকৌশলের সাথে অনেক সাধারণ ধারণা।১৯১৩ সালে, হেনরি ফোর্ড সফলভাবে ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় অ্যাসেম্বলি লাইনের ব্যবহার প্রবর্তন করেন।

ফোর্ডের এই উদ্ভাবনটি তার মডেল টি গাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য মেশিন ও শ্রমিকদের একটি নির্দিষ্ট ক্রমে সাজানোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় অ্যাসেম্বলি লাইনের একীকরণই ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার সূচনা ছিল।

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার ইতিহাস 

প্রাচীন কালে মানুষেরা হাতের তৈরি সরঞ্জাম এবং ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন কাজ করত। সেই সময় মেশিনের পরিবর্তে মানুষের শারীরিক শ্রম এবং প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করা হত।

১৮ শতকে যখন শিল্প বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটে এবং নতুন প্রযুক্তি, যেমন স্টিম ইঞ্জিনের আবিষ্কার ঘটে, তখন থেকেই ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়। এই সময়েই কারখানা এবং মেশিন ভিত্তিক উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে, কারণ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং উন্নত উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন ছিল। পরবর্তীতে, ১৯শ এবং ২০শ শতাব্দীর মধ্যে বিভিন্ন মেশিন এবং উৎপাদন পদ্ধতি আরও উন্নত হয়, এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

একনজরে ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং
শিক্ষাক্রমের নামঃ (EIIN) ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রোগ্রামের ধরণঃ পূর্ণ-সময়ের ডিপ্লোমা
কোর্সের মেয়াদ ৩-৪ বছর (সাধারণত ৮ সেমিস্টার)
শিক্ষার্থী ধরণ সহশিক্ষা
যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
মূল স্কিল উৎপাদন প্রক্রিয়া, গুণমান নিয়ন্ত্রণ, অটোমেশন সিস্টেম, সমস্যা সমাধান ও টেকনিক্যাল দক্ষতা
শিক্ষা ক্ষেত্র উৎপাদন প্রযুক্তি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন, কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স, প্রডাকশন ম্যানেজমেন্ট
কাজের ক্ষেত্র উৎপাদন কারখানা, ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি, অটোমেশন কোম্পানি, কনসালটেন্সি ফার্ম
প্রফেশনাল যোগ্যতা ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট, প্রডাকশন সিস্টেমের প্রশিক্ষণ
কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, প্রোডাকশন সুপারভাইজার, কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার
কর্মক্ষেত্রের ধরণ উৎপাদন কারখানা, অটোমেশন প্ল্যান্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি
উন্নতি ও অগ্রগতি সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, প্রডাকশন ম্যানেজার, অপারেশন ম্যানেজার
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বেতনসীমা ৳১৫,০০০ – ৳৩৫,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা ২২ – ৩০ বছর
প্রয়োজনীয় হার্ড স্কিল মেশিন অপারেশন, টেকনিক্যাল ড্রইং, উৎপাদন প্রক্রিয়ার জ্ঞান
ব্যবহৃত সফটওয়্যার CAD, CAM, ERP সফটওয়্যার, প্রডাকশন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার কেমন এবং ভবিষ্যৎ কি

ক্যারিয়ার সম্ভাবনা

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্যারিয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সাধারণত ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থী প্রোডাকশন সুপারভাইজার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করে। কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে, ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াররা প্রোডাকশন ম্যানেজার, প্রজেক্ট ম্যানেজার, এবং ম্যানুফ্যাকচারিং অপারেশন ম্যানেজারের পদে উন্নীত হতে পারে।

এছাড়াও, কর্মক্ষেত্রের বৈচিত্র্য দিক দিয়ে তারা অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স, টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যাল, এবং এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির মতো বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করতে পারে। এছাড়াও, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া উন্নত করার লক্ষ্যে গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কথা বলা হয়, তাহলে বলা যায় যে বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং খাত ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেশে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও বাড়ছে। বিভিন্ন উৎপাদনশীল শিল্প, বহুজাতিক কোম্পানি, এবং রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোতে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

এছাড়াও, ডিজিটালাইজেশন, ইন্ডাস্ট্রি, এবং অটোমেশনের বৃদ্ধির কারণে এই পেশায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং প্রক্রিয়া অটোমেশনের কারণে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত আরো দক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠছে যা ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্দেশ করে।

সমাজে ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মানা কেমন ?

আমাদের বাংলাদেশের এবং বহির বিশ্বের প্রেক্ষাপটে একজন ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারের সম্মান এবং মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ। এই পেশার গুরুত্ব এবং সম্ভাবনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর সাথে সাথে সমাজে এই পেশার সম্মানও দিন দিন বাড়ছে। যেমনঃ

সরকারি চাকরিতে মূল্যায়ন

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াররা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে মূল্যবান অবদান রাখতে পারেন। তারা সাধারণত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত এবং উৎপাদন-সম্পর্কিত পদে কর্মরত থাকেন, যা একটি সম্মানজনক অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।

পেশাগত সম্মান

ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াররা উৎপাদন এবং শিল্প ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। তাদের কাজের দক্ষতা ও জ্ঞানের কারণে প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পক্ষেত্রে তাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়। তারা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে উন্নত এবং দক্ষ করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে সফলতা এনে দেন, যা তাদের পেশাগত সম্মান বৃদ্ধি করে।

সামাজিক মর্যাদা

ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াররা সমাজে একটি বিশেষ মর্যাদা পান। তাদের কাজের গুরুত্ব, যেমন উচ্চমানের পণ্য উৎপাদন এবং শিল্পে নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ, সমাজে স্বীকৃত হয় এবং তারা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তরে অবস্থান করেন।

একজন ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াদের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়

একজন ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারের বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়। আমরা চাই এই দক্ষতা ও জ্ঞানকে ২টি ভাগে ভাগ করতে পারি। ১ম হচ্ছে সফট স্কিল এবং ২য় হচ্ছে টেকনিক্যাল স্কিল। নিম্নে ২টি স্কিলের কোন কোন বিষয় ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের জানতে হয় তা উল্লেখ্য করা হলোঃ

টেকনিক্যাল স্কিল

  • CAD/CAM (Computer-Aided Design and Manufacturing):
    CAD/CAM একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডিজাইন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং সফটওয়্যার, যা ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন অংশের নকশা এবং প্রোডাকশন প্ল্যানিংয়ের জন্য ব্যবহার করে।
  • Lean Manufacturing:
    Lean Manufacturing হলো এমন একটি পদ্ধতি যা ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় বর্জ্য কমাতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক।
  • PLC (Programmable Logic Controller):
    ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মেশিন ও সরঞ্জামের অটোমেশন এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য PLC ব্যবহৃত হয়।
  • Quality Control (QC):
    ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় গুণগতমান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন QC পদ্ধতি এবং টুলের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • Material Science:
    বিভিন্ন প্রকার মেটিরিয়ালের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের গভীর জ্ঞান থাকতে হয়।
  • Production Planning and Control:
    উৎপাদন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা, শিডিউলিং, এবং মনিটরিং করার জন্য Production Planning এবং Control এর দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • Machine Maintenance:
    ম্যানুফ্যাকচারিং মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের ক্ষেত্রে দক্ষতা থাকা প্রয়োজন, যা উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক।

সফট স্কিল

  • সমস্যা সমাধানের দক্ষতা:
    ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত জটিল সমস্যার দ্রুত এবং কার্যকর সমাধানের দক্ষতা।
  • যোগাযোগ দক্ষতা:
    প্রযুক্তিগত ধারণাগুলি সহজভাবে ব্যাখ্যা করার এবং দল ও ম্যানেজমেন্টের সাথে সুসমন্বয় বজায় রাখার ক্ষমতা।
  • উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা:
    উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নতুন সমাধান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষমতা।
  • সময় ব্যবস্থাপনা:
    একাধিক প্রকল্প এবং সময়সীমা মোকাবেলা করার দক্ষতা।
  • নেতৃত্ব:
    প্রকল্প এবং দল পরিচালনার দক্ষতা, যা ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়ক

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং উচ্চ শিক্ষা

পাবলিক ইউনিভার্সিটি (সরকারি):

ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)। যেখানে শুধু মাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়া সুযোগ রয়েছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST) এবং এসোসিয়েট মেম্বার অফ দা ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (AIME)-তে।

বেসরকারি ইউনিভার্সিটি:

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা ইউনিভার্সিটি ব্যথিত। অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, এফোর্টেবল টিউশন ফি, সন্ধ্যাকালীন ক্লাস এবং চাকরি করে পড়াশোনার সুযোগ।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষাঃ

ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা চাইনা, রাশিয়া, ভারত সহ অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রাহণ করতে পারে। যেমন, ইউকে (UK), ইউএসএ (USA), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ড (Netherlands), রোমানিয়া (Romania), ইতালি (Italy), পর্তুগাল (Portugal), ফ্রান্স (Franch), জাপান (Japan), জার্মানি (Germany), পোল্যান্ড (Poland) সহ ইউরোপের এবং পশ্চিমের প্রায় অধিকাংশ দেশে উচ্চ গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রতিটি দেশের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুল-ফিল করতে হয়। উলেক্ষ্য যে, অসাধ্য কিছু না, চাইলেই সম্ভব। অনেকে পড়াশোনার উদেশ্য বাহিরে গিয়ে, পড়াশোনা শেষ করে বেশ ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রন্থা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য না। ডিপ্লোমাতে অধ্যায়নরত প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য একই রুলস বিদ্যামান।

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াদের চাকরির ক্ষেত্র সমহূ

ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং একটি সম্ভাবনাময় পেশা। এই ডিগ্রিধারীরা শিল্প উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পান। আসুন জেনে নিই তাদের জন্য কী কী ক্ষেত্র খোলা রয়েছে:

সরকারি ক্ষেত্র সমূহ

  • বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (BSCIC):
    ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে BSCIC-এ বিভিন্ন শিল্প কারখানার প্রযুক্তিগত সহায়তা, উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নয়ন, এবং মান নিয়ন্ত্রণের কাজে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।
  • বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন (BSEC):
    বিভিন্ন ইস্পাত ও মেশিনারি উৎপাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
  • বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPC):
    তেল, গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম সংশ্লিষ্ট উৎপাদন কারখানায় ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়া পরিচালনা এবং মান নিয়ন্ত্রণের জন্য চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়।
  • বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (BPDB):
    বিদ্যুৎ উৎপাদন ও পরিবহনকারী যন্ত্রপাতি এবং মেশিনারি রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনের জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ দেয়া হয়।
  • বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন:
    মানুষিক গবেষণা কেন্দ্র ও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য চাকরির সুযোগ থাকে।
  • বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড:
    কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক বা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়।

বেসরকারি সেক্টর

  • উৎপাদনশীল কারখানা:
    গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইল, এবং অন্যান্য উৎপাদনশীল কারখানায় ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হয়। তারা উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ, এবং মান নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন।
  • অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি:
    বিভিন্ন অটোমোবাইল কোম্পানিতে গাড়ি এবং যন্ত্রাংশ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
  • ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি:
    ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন প্রক্রিয়া, মেশিনারি পরিচালনা এবং মান নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সুযোগ।
  • প্লাস্টিক এবং পলিমার ইন্ডাস্ট্রি:
    প্লাস্টিক ও পলিমার সামগ্রী উৎপাদন কারখানায় ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়।
  • কনসালটেন্সি ফার্ম:
    বিভিন্ন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তিগত পরামর্শ প্রদান এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নয়নের জন্য কনসালটেন্সি ফার্মে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
  • রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D):
    উৎপাদনশীল পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য গবেষণা এবং নতুন উৎপাদন পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য R&D সেক্টরে কাজ করার সুযোগ।

একজন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াদের কাজ কী

একজন ডিপ্লোমা ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারের কাজগুলো নিম্নে উল্লেখ্য করা হলোঃ

  • উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য ডিজাইন এবং পরিকল্পনা তৈরি করা।
  • উৎপাদন লাইনের কার্যকারিতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করা।
  • মেশিন এবং সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত করা।
  • উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময় যান্ত্রিক ত্রুটি নির্ণয় এবং তা সমাধান করা।
  • গুণগত মান নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরীক্ষা ও পর্যালোচনা করা।
  • উৎপাদন কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের সরবরাহ নিশ্চিত করা।
  • উৎপাদন সময়সূচী এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন পরিচালনা করা।
  • উৎপাদন সিস্টেমের উন্নয়নের জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতির প্রয়োগ করা।

ফিউচার ট্রেন্ড ইন ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং

ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভবিষ্যতে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি এবং ট্রেন্ড আসছে, যা এই ক্ষেত্রটিকে আরও উন্নত এবং কার্যকর করে তুলবে। নিচে তা পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হল

ইন্ডাস্ট্রি এবং স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং

ইন্ডাস্ট্রি-এর মাধ্যমে ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেট অব থিংস (IoT), বিগ ডেটা, এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

অটোমেশন এবং রোবটিক্স

উৎপাদন খাতে রোবটিক্স এবং অটোমেশন প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এটি ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় মানুষের হস্তক্ষেপ কমিয়ে দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক।

3D প্রিন্টিং এবং অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং

3D প্রিন্টিং এবং অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং প্রযুক্তি দ্রুত উৎপাদন এবং প্রোটোটাইপ তৈরিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। 

সাসটেইনেবল ম্যানুফ্যাকচারিং

পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতি এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য উপাদানের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে এবং পরিবেশের উপর প্রভাব কমাতে সহায়ক।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং মেশিন লার্নিং

ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় AI এবং মেশিন লার্নিং এর ব্যবহার দ্রুততর এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক। 

সাপ্লাই চেইন ডিজিটালাইজেশন

সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, যা উৎপাদন প্রক্রিয়া আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করতে সহায়ক। 

অ্যাডভান্সড মেটিরিয়ালস

নতুন ও উন্নত উপাদানের ব্যবহার যেমন কার্বন ফাইবার, ন্যানোমেটিরিয়াল, এবং বায়োডিগ্রেডেবল মেটিরিয়ালস ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

বেতন কাঠামো

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি দশম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করলে তার মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ করে বেতন বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯,৬০০ টাকার বাড়িভাড়া ভাতা এবং ১,৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। ফলে মোট বেতন-ভাতাদি দাঁড়ায় ২৭,১০০ টাকা। এই বেতন কাঠামো একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সাথে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ট্রেইনি অর্থাৎ ইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় সঠিক ডেটা নিয়ে আসা সম্ভব না। চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

শেষ কথা

ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি ক্ষেত্র যা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বিকশিত হচ্ছে। এটি শিল্প এবং উৎপাদন খাতের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা প্রতিদিনের জীবনকে উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে

লেখক সম্পর্কে

abhinoboschool

নিউজ
চাকরি
Home
Question
Search