একটি ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হল একটি বিশেষ প্রোগ্রাম যা শিক্ষার্থীদেরকে সামুদ্রিক জাহাজ পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং জ্ঞান দিয়ে সজ্জিত করে। পাঠ্যক্রম সামুদ্রিক মেকানিক্স, বৈদ্যুতিক সিস্টেম, নৌ স্থাপত্য, এবং নিরাপত্তা প্রবিধানের মত বিষয়গুলি কভার করে। এই ডিপ্লোমা সামুদ্রিক শিল্পে আরও পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পেশার সারক্ষেপ
১৮০৭ সালে, রবার্ট ফুলটন সফলভাবে জলের মধ্য দিয়ে একটি জাহাজকে চালিত করার জন্য একটি বাষ্প ইঞ্জিন ব্যবহার করেছিলেন। ফুলটনের জাহাজটি তার সামুদ্রিক চালনা ব্যবস্থা হিসাবে একটি ছোট কাঠের প্যাডেল চাকাকে শক্তি দেওয়ার জন্য ইঞ্জিন ব্যবহার করেছিল। একটি সামুদ্রিক বাষ্প ইঞ্জিন তৈরি করার জন্য একটি জলযানে একটি বাষ্প ইঞ্জিনের একীকরণ ছিল মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার সূচনা।
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের পেশার ইতিহাস
সাধারনত আর্কিমিডিসকে ঐতিহ্যগতভাবে প্রথম সামুদ্রিক প্রকৌশলী হিসেবে গণ্য করা হয় কারন তিনি প্রাচীনকালে বেশ কয়েকটি সামুদ্রিক প্রকৌশল ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। আধুনিক সামুদ্রিক প্রকৌশল শিল্প বিপ্লবের শুরুতে (1700 এর দশকের গোড়ার দিকে )।
বলা হয় যে, প্রাচীন কালে নদী ও সমুদ্র পাড়ে বসবাসকারী মানুষ নৌকা তৈরি করত এবং তা চালাত। তখন ইঞ্জিনের জায়গায় হাতের হাতিয়ার ও প্রাকৃতিক শক্তি ব্যবহার করা হত।
১৮ শতকে যখন বাস্প ইঞ্জিনের আবিস্কার ঘটে ঠিক তখন থেকেই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একটি নতুন যুগের সুচনা হয়। কারন সেই সময়েই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, কারণ জাহাজগুলোর ইঞ্জিন পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং মেরামতের জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন ছিল। পরবর্তিতে ১৯শ এবং ২০শ শতাব্দীর মধ্যে স্টিম ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ডিজেল ইঞ্জিনের ব্যবহার শুরু হয়, এবং এরপরই জাহাজে ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
শিক্ষাক্রমের নাম (EIIN) | ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার |
---|---|
প্রোগ্রামের ধরণ | পূর্ণ-সময়ের ডিপ্লোমা |
কোর্সের মেয়াদ | ৩-৪ বছর (সাধারণত ৮ সেমিস্টার) |
যোগ্যতা | এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ |
মূল স্কিল | মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, প্রপালশন সিস্টেমের জ্ঞান, সমস্যার সমাধান ও টেকনিক্যাল দক্ষতা। |
শিক্ষা ক্ষেত্র | মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, শিপ ডিজাইন, মেরিটাইম সেফটি, মেকানিক্যাল ও ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমস |
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা | ২১-৩০ বছর |
কাজের ক্ষেত্র | CAD, ERP, জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ, নৌবাহিনী, অফশোর কোম্পানি, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম |
প্রফেশনাল যোগ্যতা | মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট, ইঞ্জিন রেটিং সিস্টেমের প্রশিক্ষণ |
কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ | জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, শিপ অপারেটর |
কর্মক্ষেত্রের ধরণ | সমুদ্রগামী জাহাজ, অফশোর প্ল্যাটফর্ম, শিপ বিল্ডিং ইয়ার্ড |
উন্নতি ও অগ্রগতি | CAD (Computer-Aided Design), ERP (Enterprise Resource Planning), সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, চিফ ইঞ্জিনিয়ার, শিপ ম্যানেজার |
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার পড়ার যোগ্যতা
যে কোন শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এস.এস.সি/দাখিল/এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/দাখিল (ভোকেশনাল) /সমমানের পরীক্ষা অথবা ‘ও’ লেভেল এবং জিপিএ পদ্ধতি চালুর পূর্বের এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিম্নোক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
এস.এস.সি/সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ পদ্ধতিতে উত্তীর্ণদের জন্য: ছাত্র: সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ২.০ সহ কমপক্ষে জিপিএ ৩.০। ছাত্রী: সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ২.০ সহ কমপক্ষে জিপিএ ২.৫। জিপিএ পদ্ধতির পূর্বের এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য: ছাত্র/ছাত্রী: ন্যূনতম ২য় বিভাগ। ‘ও’ লেভেলে উত্তীর্ণদের জন্য: ছাত্র/ছাত্রী: একটি বিষয়ে ‘সি’ গ্রেড এবং গণিতসহ অন্য যেকোন দুটি বিষয়ে ন্যূনতম ‘ডি’ গ্রেড থাকতে হবে। |
যে কোন শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এস.এস.সি/ দাখিল /এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/ দাখিল (ভোকেশনাল) / সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কমপক্ষে জিপিএ ২.০ প্রাপ্ত। অথবা ‘ও’ লেভেল এবং জিপিএ পদ্ধতি চালুর পূর্বে এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় যে কোন সালে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। |
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার কেমন এবং ভবিষ্যৎ কি ?
ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার-এর ক্যারিয়ার সম্ভাবনা আশাব্যঞ্জক। সাধারনত মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করে।কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন ও প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন সম্পন্ন করার পর, মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, তৃতীয় ইঞ্জিনিয়ার, দ্বিতীয় ইঞ্জিনিয়ার এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ারের পদে উন্নীত হয়ে থাকে।
এছারাও কর্মক্ষেত্রের বৈচিত্র্য দিক দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান জাহাজ, শিপ বিল্ডিং ইয়ার্ড, অফশোর কোম্পানি, এবং এমনকি নৌবাহিনীতেও কাজ করতে পারে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কথা বলি তাহলে বলা যায় যে বাংলাদেশের শিপিং খাত ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেশে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও বাড়ছে।বিভিন্ন শিপইয়ার্ড, নৌপরিবহন কোম্পানি এবং সরকারি সংস্থায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।
এছারাও, ডিজিটালাইজেশন, অটোমেশন, এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার এই পেশায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে।পরিবেশ সচেতনতা বাড়ার কারণে গ্রীন শিপিং বা পরিবেশ-বান্ধব জাহাজের চাহিদা বাড়ছে। যার ফলে এটি ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নতুন এক কর্মক্ষেত্র তৈরি করবে।
সমাজে একজন ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মানা কেমন
আমাদের বাংলাদেশের এবং বহির বিশ্বের প্রেক্ষাপটে একজন ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের সম্মান এবং মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ। এই পেশার গুরুত্ব এবং সম্ভাবনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর সাথে সাথে সমাজে এই পেশার সম্মানও দিন দিন বাড়ছে। যেমনঃ
সরকারি চাকরিতে মূল্যায়ন
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা বাংলাদেশ সরকারের দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করেন, যা একটি সম্মানজনক অবস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়।
পেশাগত সম্মান
মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা সমুদ্রগামী জাহাজ এবং সমুদ্র সম্পর্কিত কাজের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হন। সমাজের সব পেশার মানুষগন তাদের এই পেশাগত কারনে সম্মান করে থাকেন। তাদের দক্ষতা শুধু তাদের প্রতিষ্ঠানেই নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরে সম্মানিত হয়।
সামাজিক মর্যাদা
মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা সমাজে একটি বিশেষ মর্যাদা পান।তাদের কাজের গুরুত্ব ও সাফল্য সমাজে স্বীকৃত হয় এবং তারা সমাজে এক বিশেষ স্থানে অবস্থান করেন।
অবেশেষে বলা যায়, সমাজে একজন সমাজে একজন ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের সম্মান এবং মূল্যায়ন অত্যন্ত উচ্চ।
একজন ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়
একজন ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়। আমরা চাই এই দক্ষতা ও জ্ঞান কে ২ টি ভাগে ভাগ করতে পারি। ১ম হচ্ছে সফট স্কিল এবং ২য় হচ্ছে টেকনিক্যাল স্কিল। নিম্নে ২ টি স্কিল এর কোন কোন বিষয় মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের জানতে হয় তা উল্লেখ্য করা হলোঃ
টেকনিক্যাল স্কিল
- AutoCAD: AutoCAD একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডিজাইন সফটওয়্যার, যা মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা জাহাজের বিভিন্ন অংশের নকশা এবং ড্রাফটিংয়ের জন্য ব্যবহার করে।
- HVAC (Heating, Ventilation, and Air Conditioning): HVAC সিস্টেম জাহাজের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বায়ু প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- Diesel Engines: জাহাজের প্রাথমিক প্রোপালশন সিস্টেম হিসেবে ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের ডিজেল ইঞ্জিনের অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং মেরামতের ক্ষেত্রে গভীর জ্ঞান থাকতে হয়।
- Shipyard: শিপইয়ার্ডে কাজ করার সময় মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের বিভিন্ন নির্মাণ এবং মেরামত প্রকল্পের উপর দক্ষতা প্রয়োজন।
- Technical Reports: মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের বিভিন্ন প্রকল্প ও সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য, মেরামতের প্রতিবেদন, এবং রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনার জন্য টেকনিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করতে হয়।
- PMS (Planned Maintenance System): PMS হল একটি সিস্টেম যা জাহাজের বিভিন্ন অংশের রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম পরিচালনা করে।
- Fuel Systems: জাহাজের জ্বালানি ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
- Naval Architecture: এটি হচ্ছে জাহাজ ও অন্যান্য সামুদ্রিক কাঠামোর ডিজাইন, নির্মাণ, এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত এবং প্রকৌশলগত দক্ষতা। এটি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটি বিশেষ শাখা, যেখানে জাহাজের স্থিতিশীলতা, ক্ষমতা, বয়ুম্যান্স (buoyancy), এবং অন্যান্য জলযানের নকশা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এছারাও বিভিন্ন বিষয় এর উপর মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের টেকনিক্যাল স্কিল শিখতে হয়।উপরের উল্লেখ্য স্কিল ছাড়াও আরো কিছু কিছু স্কিল রয়েছে যা তাদের জানতে হয়। এছারাও কিছু সফট স্কিল রয়েছে। যেমনঃ
সফট স্কিল
- সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: জটিল বৈদ্যুতিক সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান
- যোগাযোগ দক্ষতা: প্রযুক্তিগত ধারণাগুলি সহজভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা
- উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা: নতুন সমাধান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষমতা
- সময় ব্যবস্থাপনা: একাধিক প্রকল্প ও সময়সীমা মোকাবেলা করার ক্ষমতা
- নেতৃত্ব: প্রকল্প ও দল পরিচালনার দক্ষতা
- দলগত কাজের দক্ষতা: সহকর্মী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কার্যকরভাবে কাজ করা
এই সফট স্কিলগুলো একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারকে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ করতে নয়, বরং একটি পেশাদার ও সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ার গড়তে সহায়ক।
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষা
পাবলিক ইউনিভার্সিটি (সরকারি):
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)। যেখানে শুধু মাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়া সুযোগ রয়েছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST) এবং এসোসিয়েট মেম্বার অফ দা ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (AIME)-তে।
বেসরকারি ইউনিভার্সিটি:
বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা ইউনিভার্সিটি ব্যথিত। অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, এফোর্টেবল টিউশন ফি, সন্ধ্যাকালীন ক্লাস এবং চাকরি করে পড়াশোনার সুযোগ।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষাঃ
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা চাইনা, রাশিয়া, ভারত সহ অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রাহণ করতে পারে। যেমন, ইউকে (UK), ইউএসএ (USA), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ড (Netherlands), রোমানিয়া (Romania), ইতালি (Italy), পর্তুগাল (Portugal), ফ্রান্স (Franch), জাপান (Japan), জার্মানি (Germany), পোল্যান্ড (Poland) সহ ইউরোপের এবং পশ্চিমের প্রায় অধিকাংশ দেশে উচ্চ গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রতিটি দেশের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুল-ফিল করতে হয়। উলেক্ষ্য যে, অসাধ্য কিছু না, চাইলেই সম্ভব। অনেকে পড়াশোনার উদেশ্য বাহিরে গিয়ে, পড়াশোনা শেষ করে বেশ ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রন্থা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য না। ডিপ্লোমাতে অধ্যায়নরত প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য একই রুলস বিদ্যামান।
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির ক্ষেত্র সমহূ
ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পন্ন পেশা। এই ডিগ্রিধারীরা সমুদ্রের বিশাল জগতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পান। আসুন জেনে নিই তাদের জন্য কী কী ক্ষেত্র খোলা রয়েছে:
সরকারি ক্ষেত্র সমূহ
- বাংলাদেশ নৌবাহিনী: ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত বিভিন্ন পদে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।
- বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (BSC): বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিক্যাল অফিসার, এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল পদে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়।
- বাংলাদেশ পোর্ট অথরিটি: দেশের বিভিন্ন বন্দর যেমন চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর, এবং পায়রা বন্দরে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর জ্ঞানসম্পন্ন লোকজনের জন্য চাকরির সুযোগ থাকে।
- বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (BIWTA): অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ব্যবস্থাপনা এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য এখানে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
- বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড: বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা রক্ষার কাজে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন হয়।
- বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি: এখানে শিক্ষকতা বা প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকে।
- নৌপরিবহন অধিদপ্তর: নৌপরিবহন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশাসনিক ও টেকনিক্যাল পদে চাকরি করার সুযোগ পাওয়া যায়।
বেসরকারি সেক্টর
- শিপিং কোম্পানি: জাহাজের ইঞ্জিন ও যান্ত্রিক সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা।
- অফশোর কোম্পানি: সমুদ্র তলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সরঞ্জাম পরিচালনা।
- মেরিন সার্ভিসিং কোম্পানি: জাহাজের ইঞ্জিন ও অন্যান্য যান্ত্রিক সরঞ্জামের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ।
- ড্রাই ডক ও শিপইয়ার্ড: জাহাজ নির্মাণ, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজে অংশগ্রহণ।
- মেরিন কনসালটেন্সি ফার্ম: মেরিন প্রকৌশল পরামর্শ ও সার্ভে।
- ওশানোগ্রাফি ইনস্টিটিউট: সমুদ্র সংক্রান্ত গবেষণা কাজে সহায়তা ও যান্ত্রিক সিস্টেম পরিচালনা।
- মেরিন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি: জাহাজের ইঞ্জিন এবং অন্যান্য যান্ত্রিক সরঞ্জামের মূল্যায়ন এবং পরামর্শ প্রদান।
এই ক্ষেত্রগুলোতে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয়তা, নিয়োগ প্রক্রিয়া, এবং পদভেদে অন্যান্য শর্তাবলী বিভিন্ন হতে পারে। এই ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করে একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার তার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন।
একজন ডিপ্লোমা ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী ?
- জাহাজের ইঞ্জিন ও অন্যান্য যান্ত্রিক উপাদানের নকশা বিশ্লেষণ ও উন্নয়ন করা।
- জাহাজের যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য মেকানিক্যাল সিস্টেমের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।
- যান্ত্রিক ত্রুটি নির্ণয় এবং তা মেরামত করে।
- জাহাজের জ্বালানি ব্যবস্থাপনা এবং তার দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- নিরাপত্তা মানদণ্ড মেনে যন্ত্রপাতির ইনস্টলেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা।
- ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা এবং জ্বালানির খরচ পর্যবেক্ষণ করা।
- সমুদ্রযাত্রার সময় যান্ত্রিক তদারকি এবং সমস্যা সমাধান করা।
- নিয়মিত যান্ত্রিক পরীক্ষার মাধ্যমে যন্ত্রপাতির অবস্থা যাচাই করা।
- জরুরি পরিস্থিতিতে যন্ত্রপাতির বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া।
- জাহাজের ইঞ্জিন রুমের কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকি করা।
- যান্ত্রিক অপারেশনের সময় বিভিন্ন রিপোর্ট প্রস্তুত এবং কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা।
ফিউচার ট্রেন্ড ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভবিষ্যতে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি এবং ট্রেন্ড আসছে, যা এই ক্ষেত্রটিকে আরও উন্নত এবং টেকসই করে তুলবে নিচে তা পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হল।
- ইলেকট্রিফিকেশন: জাহাজগুলোর ইঞ্জিনে ইলেকট্রিক পাসওয়েট এবং হাইব্রিড সিস্টেম ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।
- অটোনোমাস শিপিং: স্বায়ত্তশাসিত বা অটোনোমাস জাহাজের উন্নয়ন এবং ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- ডিজিটালাইজেশন ও স্মার্ট শিপিং: জাহাজের বিভিন্ন সিস্টেমের ডিজিটাল মনিটরিং এবং কন্ট্রোল ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে।
- সাসটেইনেবল প্রযুক্তি: পরিবেশগত দিক থেকে সচেতন প্রযুক্তির উন্নয়ন যেমন লো-সালফার ফুয়েল, পুনঃব্যবহারযোগ্য উপাদান এবং ইকো-ফ্রেন্ডলি ডিজাইন ব্যবহার করা হচ্ছে।
- রোবটিক্স ও অটোমেশন: রোবটিক প্রযুক্তি এবং অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে জাহাজের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা হচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে অনেক গুলোই বর্তমানে সফল। তবে প্রপারলি ভাবে এখন ও কিছু বাধা ধরা আছে আমাদের। অদূর ভবিষ্যতে আমরা উপরের বিষয় গুলো নিশ্চিত দেখতে পারব বলে আমি মনে করি। এবং এই প্রযুক্তি এবং ট্রেন্ডগুলো মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে, যেখানে জাহাজ চলাচল হবে আরও নিরাপদ, দক্ষ এবং পরিবেশবান্ধব
বেতন কাঠামো
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি দশম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করলে তার মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ করে বেতন বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯,৬০০ টাকার বাড়িভাড়া ভাতা এবং ১,৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। ফলে মোট বেতন-ভাতাদি দাঁড়ায় ২৭,১০০ টাকা। এই বেতন কাঠামো একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সাথে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।
বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ট্রেইনি অর্থাৎ ইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় সঠিক ডেটা নিয়ে আসা সম্ভব না। চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
শেষ কথা
মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা সমুদ্রগামী জাহাজ এবং সমুদ্র সম্পর্কিত কাজের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হন। সমাজের সব পেশার মানুষগন তাদের এই পেশাগত কারনে সম্মান করে থাকেন। তাদের দক্ষতা শুধু তাদের প্রতিষ্ঠানেই নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন স্তরে সম্মানিত হয়।
এই পেশায় যোগদানের মাধ্যমে একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শুধু নিজেকে একটি স্থিতিশীল ও আকর্ষণীয় ক্যারিয়ারের পথে পরিচালিত করেন না, বরং আন্তর্জাতিক মেরিটাইম শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।