ক্যারিয়ার প্রোফাইল

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার

লিখেছেন mstlima

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার” একটি সৃজনশীল ও প্রযুক্তি নির্ভর পেশার দুয়ার উন্মোচন করে। এই কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভবনের নকশা, পরিকল্পনা এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে। অটোক্যাড ও থ্রিডি মডেলিংসহ বিভিন্ন ডিজাইন সফটওয়্যারের ব্যবহার শেখানো হয়। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজের সুযোগসহ, নিজের ফার্ম গড়ার সম্ভাবনাও উন্মুক্ত।

Table of Contents

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার পেশার ইতিহাস

আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার সূচনা বিশ্বব্যাপী ১৯শ শতাব্দীর শেষের দিকে হলেও বাংলাদেশে এটি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর গতি পায়। মূলত তখন থেকেই দেশের অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। 

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (BUET) এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্কিটেকচার ও ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা শুরু হয়। এর ফলে আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারদের পেশাগত সুযোগ বাড়তে থাকে এবং এই ক্ষেত্রটি ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এক নজরে ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার

সাধারন পদবীআর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার
বিভাগইঞ্জিনিয়ারিং
শিক্ষাগত যোগ্যতাডিপ্লোমা ডিগ্রি আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ
প্রতিষ্ঠানের ধরণসরকারি/বেসরকারি/রিয়েল এস্টেট/ফার্ম
ক্যারিয়ারে ধরণফুল টাইম, ফ্রিল্যান্স
লেভেলএন্ট্রি/মিড
প্রধান দায়িত্বসমূহপ্রকল্পের নকশা তৈরি, ইন্টোরিয়র এবং এক্সটেরিওর সৌন্দর্য বর্ধন, জায়গার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা।
টেকনিক্যাল স্কিলঅটোক্যাড (AutoCAD), 3D মডেলিং, সফটওয়্যার দক্ষতা, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা এবং ডিজাইন ও নকশা তত্ত্ব।
সফট স্কিলকমিউনিকেশন, প্রবলেম সলভিং, টাইম ম্যানেজমেন্ট, ক্রিয়েটিভিটি এবং টিমওয়ার্ক।
বেতন কাঠামোইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন। সরকারিতে ১০ম গ্রেডের বেতন থেকে শুরু হয়।

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা

যে কোন শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এস.এস.সি/দাখিল/এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/দাখিল (ভোকেশনাল) /সমমানের পরীক্ষা অথবা ‘ও’ লেভেল এবং জিপিএ পদ্ধতি চালুর পূর্বের এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিম্নোক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি
এস.এস.সি/সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ পদ্ধতিতে উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র: সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ২.০ সহ কমপক্ষে জিপিএ ৩.০।
ছাত্রী: সাধারণ গণিত বা উচ্চতর গণিতে জিপি ২.০ সহ কমপক্ষে জিপিএ ২.৫।

জিপিএ পদ্ধতির পূর্বের এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র/ছাত্রী: ন্যূনতম ২য় বিভাগ।

‘ও’ লেভেলে উত্তীর্ণদের জন্য:
ছাত্র/ছাত্রী: একটি বিষয়ে ‘সি’ গ্রেড এবং গণিতসহ অন্য যেকোন দুটি বিষয়ে ন্যূনতম ‘ডি’ গ্রেড থাকতে হবে।
যে কোন শিক্ষা বোর্ড অথবা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এস.এস.সি/ দাখিল /এস.এস.সি (ভোকেশনাল)/ দাখিল (ভোকেশনাল) / সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কমপক্ষে জিপিএ ২.০ প্রাপ্ত।

অথবা ‘ও’ লেভেল এবং জিপিএ পদ্ধতি চালুর পূর্বে এস.এস.সি বা সমমান পরীক্ষায় যে কোন সালে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।

যেসকল প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায়

  • সরকারিঃ বাংলাদেশের প্রায় ১৩ টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়।
  • প্রাইভেটঃ একইভাবে বাংলাদেশ প্রায় প্রতিটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়ে থাকে।

“ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার” ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ কেমন

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার পাস করা একজন শিক্ষার্থীর জন্য ক্যারিয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বর্তমান বিশ্বে এবং বাংলাদেশেও নির্মাণ শিল্পে আর্কিটেক্টদের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। 

২০২৫ সালের মধ্যে গ্লোবাল আর্কিটেকচার মার্কেটের মূল্য $৪৪৩.৬ বিলিয়ন ছাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা এ পেশায় নিযুক্তদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে। ডিজাইন সফটওয়্যার ও সৃজনশীলতায় দক্ষতা থাকলে একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার সহজেই সিনিয়র পদে উন্নীত হতে পারেন এবং নিজের ফার্ম গড়ার সুযোগও রয়েছে।

সমাজে ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের সম্মান কেমন

একজন ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার আমাদের চারপাশের পরিবেশকে সুন্দর ও কার্যকরী করে তোলেন। ভবন, ব্রিজ, পার্ক – সবকিছুর পিছনে রয়েছে তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা। এই পেশা শুধু প্রযুক্তিগত জ্ঞান নয়, শিল্পবোধও দাবি করে। তারা স্থাপত্যের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তারা শুধু ভবন বা স্থাপনার নকশা তৈরি করেন না; বরং তারা সমাজের সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখেন। তাদের সৃজনশীল কাজগুলো শহর এবং গ্রামের উন্নয়নের প্রতীক হয়ে ওঠে। 

উন্নত প্রযুক্তি ও নকশার দক্ষতা দিয়ে তারা আধুনিক স্থাপত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেন। এ কারণেই সমাজে তারা উচ্চ মর্যাদায় অভিষিক্ত। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের পেশাগত সাফল্য সমাজে সম্মান ও গর্বের কারণ হয়।

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষা

পাবলিক ইউনিভার্সিটি (সরকারি):

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)। যেখানে শুধু মাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে।

তবে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী নির্মানাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি এবং ঠাকুরগাঁও) এর সকল আসনে ডুয়েট এর আদলে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশকৃত শিক্ষার্থীরা শতভাগ ভর্তির সুযোগ পাবে। এছাড়া সুযোগ রয়েছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST) এবং এসোসিয়েট মেম্বার অফ দা ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (AIME)-তে।

বেসরকারি ইউনিভার্সিটি:

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা ইউনিভার্সিটি ব্যথিত। অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, এফোর্টেবল টিউশন ফি, সন্ধ্যাকালীন ক্লাস এবং চাকরি করে পড়াশোনার সুযোগ।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা:

ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা চীন, রাশিয়া, ভারত সহ অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। যেমনঃ ইউকে (UK), ইউএসএ (USA), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ড (Netherlands), রোমানিয়া (Romania), ইতালি (Italy), পর্তুগাল (Portugal), ফ্রান্স (Franch), জাপান (Japan), জার্মানি (Germany), পোল্যান্ড (Poland) সহ ইউরোপের এবং পশ্চিমের প্রায় অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রতিটি দেশের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুল-ফিল করতে হয়। উল্লেখ্য যে, অসাধ্য কিছু না, চাইলেই সম্ভব। অনেকে পড়াশোনার উদ্দেশে বাহিরে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করে বেশ ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রথা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য না। ডিপ্লোমাতে অধ্যায়নরত প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য একই রুলস বিদ্যমান।

একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়

একজন ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের দক্ষতা ও জ্ঞানগুলো হলো:

টেকনিক্যাল স্কিলঃ

  • CAD (Computer-Aided Design) সফটওয়্যার দক্ষতা:
    • AutoCAD, Revit, SketchUp, Rhino ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা।
    • ডিজাইন তৈরি, 2D ও 3D মডেলিং এবং ড্রাফটিংয়ের জন্য CAD সফটওয়্যার ব্যবহার।
    • ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং এবং নকশা বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং (BIM):
    • BIM (Building Information Modeling) সফটওয়্যার যেমন Revit বা Navisworks ব্যবহার করা।
    • ডিজাইন এবং কনস্ট্রাকশনের বিভিন্ন স্তরের সমন্বয় সাধন করতে পারা।
    • প্রকল্পের জীবনচক্র পরিচালনার জন্য BIM এর ব্যবহার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা:
    • বিভিন্ন স্ট্রাকচারাল উপাদানের (যেমন কংক্রিট, স্টিল, কাঠ) ব্যবহার এবং তাদের উপযোগিতা বোঝা।
    • ভবনের স্ট্রাকচারাল নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং লোড সহ্য করার ক্ষমতা নিশ্চিত করা।
  • বিল্ডিং কোড এবং রেগুলেশন:
    • স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিল্ডিং কোড এবং রেগুলেশন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।
    • নিরাপত্তা এবং আইনত প্রয়োজনীয় নীতিমালা অনুসরণ করে ডিজাইন তৈরি করা।
  • গ্রীন বিল্ডিং এবং সাসটেইনেবিলিটি:
    • LEED (Leadership in Energy and Environmental Design) সার্টিফিকেশন বা সমমানের গ্রিন বিল্ডিং স্ট্যান্ডার্ড সম্পর্কে জ্ঞান।
    • সাসটেইনেবল ডিজাইন প্র্যাকটিসের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং উপাদান নির্বাচন।
  • স্ট্রাকচারাল অ্যানালাইসিস এবং ডিজাইন সফটওয়্যার:
    • ETABS, STAAD.Pro, SAP2000 ইত্যাদি স্ট্রাকচারাল অ্যানালাইসিস টুল ব্যবহারের দক্ষতা।
    • স্ট্রাকচারাল সেফটি বিশ্লেষণ ও ডিজাইন অ্যানালাইসিস করা।
  • ডিজাইন ও নকশা তত্ত্ব:
    • স্থাপত্য নকশা ও তত্ত্ব সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা।
    • ভবনের কার্যকারিতা, নান্দনিকতা এবং পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিজাইন তৈরি করা।

সফট স্কিল:

  • কমিউনিকেশনঃ ক্লায়েন্ট, টিম মেম্বার, এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরিষ্কার ও কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে পারা।
  • প্রবলেম সলভিংঃ জটিল সমস্যা বিশ্লেষণ করে সৃজনশীল এবং কার্যকর সমাধান বের করতে পারা এবং প্রকল্প চলাকালীন উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলোর কার্যকর সমাধান খুঁজে পাওয়া।
  • টাইম ম্যানেজমেন্টঃ সময়মতো প্রকল্প সম্পন্ন করার জন্য কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারা, ডেডলাইন মেনে কাজ করার অভ্যাস এবং মাল্টি-টাস্কিং দক্ষতা।
  • টিমওয়ার্কঃ সিভিল প্রকল্পে বিভিন্ন পেশাদারদের সাথে দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা খুবই জরুরি। দলকে মোটিভেট করা এবং সমন্বয় বজায় রাখা প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
  • ক্রিয়েটিভিটিঃ সমস্যার নতুন ও উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষমতা আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারদের পেশায় সফলতা আনে। বিশেষ করে, প্রকল্পে কার্যকর এবং টেকসই ডিজাইন তৈরি করতে সৃজনশীলতা প্রয়োজন।

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির ক্ষেত্র সমূহ

সরকারি চাকরির ক্ষেত্র

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সরকারি ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ রয়েছে। তারা নিম্নলিখিত সেক্টরগুলোতে কাজ করতে পারেন:

  • পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (PWD)
  • রাজউক
  • স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED)
  • সিটি কর্পোরেশন
  • হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (HBRI)
  • বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (BRTC)
  • বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প
  • আর্কিটেকচারাল ফার্মে সরকারি প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার সুযোগ

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্র

বেসরকারি সেক্টরেও ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারা নিম্নলিখিত সেক্টরগুলোতে কাজ করতে পারেন:

  • রিয়েল এস্টেট কোম্পানি
  • গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠান
  • আর্কিটেকচারাল কনসালটেন্সি ফার্ম
  • ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানি
  • ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম
  • কন্সট্রাকশন কোম্পানি
  • প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম
  • বেসরকারি পলিটেকনিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
  • 3D মডেলিং ও অ্যানিমেশন স্টুডিও

একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের কাজ কী

একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের কাজ হলো স্থাপত্য ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সেতুবন্ধন তৈরি করা। তারা শুধু সুন্দর ভবন নকশা করেন না, বরং সেগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি জ্ঞানও প্রয়োগ করেন।

তাদের মূল কাজগুলো হলো:

  • গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভবনের কনসেপ্ট ও নকশা তৈরি করা
  • কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে 2D ও 3D মডেল তৈরি করা
  • নির্মাণ সামগ্রী ও পদ্ধতি নির্বাচন করা
  • প্রকল্পের বাজেট ও সময়সীমা নির্ধারণ করা
  • নির্মাণকাজ তদারকি ও পরিচালনা করা
  • নিরাপত্তা ও পরিবেশগত বিষয়গুলো নিশ্চিত করা
  • অন্যান্য পেশাজীবীদের (যেমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) সাথে সমন্বয় করা

তারা বাসগৃহ, অফিস, স্কুল, হাসপাতাল থেকে শুরু করে বড় বড় কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ডিজাইন ও নির্মাণে কাজ করেন। তাদের লক্ষ্য থাকে যেন ভবনগুলো সুন্দর, নিরাপদ, কার্যকর ও টেকসই হয়।

ফিউচার ট্রেন্ড ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং

আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, যা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং টেকসইতার চাহিদা দ্বারা চালিত। একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হল স্মার্ট বিল্ডিং প্রযুক্তির সংযোজন। এই প্রযুক্তি ভবনগুলোকে আরও শক্তি-সাশ্রয়ী, পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী এবং ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনের প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা দেয়। নিচে আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং ফিউচার ট্রেন্ড নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

  • স্মার্ট বিল্ডিং: IoT ডিভাইস ও AI ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, শক্তি সাশ্রয়, ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
  • সবুজ স্থাপত্য: পরিবেশবান্ধব উপকরণ, সৌর প্যানেল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও দক্ষ ডিজাইন।
  • মডুলার নির্মাণ: পূর্ব-নির্মিত অংশ ব্যবহার করে দ্রুত ও কম খরচে ভবন তৈরি।
  • 3D প্রিন্টিং: জটিল কাঠামো নির্মাণে 3D প্রিন্টিং প্রযুক্তির ব্যবহার।
  • আরও উঁচু, আরও পাতলা: উচ্চতর ও সরু আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের প্রবণতা।
  • ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: ডিজাইন পর্যালোচনা ও গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নয়নে VR ব্যবহার।
  • জলবায়ু সহনশীল ডিজাইন: বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প প্রতিরোধী স্থাপত্য।
  • বায়োফিলিক ডিজাইন: প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য ভবনে প্রাকৃতিক উপাদানের অন্তর্ভুক্তি।
  • নমনীয় স্থান: বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য স্থান ডিজাইন।
  • AI-চালিত ডিজাইন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অপ্টিমাইজড ও ব্যক্তিগত স্থাপত্য সমাধান।

এই প্রবণতাগুলো আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিংকে আরও টেকসই, কার্যকর ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক করে তুলবে। 

বেতন কাঠামো

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি দশম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করলে তার মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ করে বেতন বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯,৬০০ টাকার বাড়িভাড়া ভাতা এবং ১,৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। ফলে মোট বেতন-ভাতাদি দাঁড়ায় ২৭,১০০ টাকা। এই বেতন কাঠামো একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সাথে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার ট্রেইনি অর্থাৎ ইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় সঠিক ডেটা নিয়ে আসা সম্ভব না। চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। 

শেষ কথা 

আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং একটি সৃজনশীল এবং সম্ভাবনাময় পেশা, যা প্রযুক্তি এবং টেকসইতার সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যারা এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য ভবিষ্যতে অসংখ্য সুযোগ অপেক্ষা করছে। সৃজনশীল চিন্তা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা এই পেশার মূল চাবিকাঠি।


উল্লেখ্য যে, প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর সম্পর্কে কিছু তথ্য একই থাকে। যার প্রধান কারণ ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরগুলো একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই নিচের উল্লেখিত পয়েন্টগুলো একটি মাত্র ইনফরমেটিভ আর্টিকেলে রাখা হয়েছে যেন, যে কেউ খুব সহজে তথ্যগুলো পেতে পারে এবং একটি আর্টিকেলে বিস্তারিত পেয়ে যায়। যেমন পেশার সারসংক্ষেপ,  ইতিহাস, পড়ার যোগ্যতা, উচ্চ শিক্ষা, ক্যারিয়ার, বেতন কাঠামো, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি।

লিমা খাতুন, ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার, তেজগাঁও, ঢাকা, প্রকাশ-২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,
<https://abhinoboschool.com/ডিপ্লোমা-ইন-আর্কিটেকচার-ইঞ্জিনিয়ার/>

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার এর গ্রেড কত?

সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী একজন ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার যে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১০ম গ্রেডে বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নন ক্যাডার গেজেটেড অফিসার হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।

আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারের কি কি টেকনিক্যাল স্কিল থাকা দরকার?

CAD (Computer-Aided Design), BIM (Building Information Modeling) সফটওয়্যার, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিল্ডিং কোড, ভবনের স্ট্রাকচারাল ও আর্কিটেকচারাল নকশা সম্পর্কে দক্ষতা ইত্যাদি।

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার কোথায় কাজ করে থাকে?

সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত, সরকারি বিধিবদ্ধ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে।

শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে

লেখক সম্পর্কে

mstlima

নিউজ
চাকরি
Home
Question
Search