ক্যারিয়ার প্রোফাইল

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার

লিখেছেন abhinoboschool

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হলো একটি প্রফেশনাল কোর্স যা শিক্ষার্থীদের অটোমোবাইলের ডিজাইন, ম্যানুফ্যাকচারিং, এবং মেইনটেন্যান্স সম্পর্কে গভীর জ্ঞান প্রদান করে। এই কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন, ব্রেকিং সিস্টেম, এবং যানবাহনের অন্যান্য যান্ত্রিক উপাদান সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করে। এছাড়াও, এটি শিক্ষার্থীদের কারিগরি জ্ঞান এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বিকাশে সহায়ক হয়, যা তাদের অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্মোচন করে।

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্ট

আপনি কি গাড়ির জগতে ক্যারিয়ার গড়তে চান? তাহলে আমি বলব ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার আপনার জন্য যথাযত। ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হল গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহনের বিভিন্ন দিকে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জনের একটি পেশাগত কোর্স। যেখানে আপনি গাড়ির ডিজাইন,উৎপাদন রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের মতন কাজগুলো করতে সক্ষম হবেন।

এছাড়াও নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গাড়ির যন্ত্রাংশনের পরীক্ষা, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ মেরামত, উৎপাদন ও  ডিজাইন ইত্যাদি কাজ একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং করে থাকে। এই পেশায় আপনি আপনার জ্ঞান ও দক্ষতার মাধ্যমে গাড়ি শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন।

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার পেশার ইতিহাস 

১৮শ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং ১৯শ শতাব্দীর শুরুতে শিল্প বিপ্লবের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হতে শুরু করে। এই সময়ে ঘোড়ায় টানা গাড়ি এবং ম্যানুয়াল যানবাহনের পরিবর্তে বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের ব্যবহার শুরু হয়, যার ফলে অটোমোবাইল শিল্পে একটি বিপ্লব ঘটে।

২০শ শতাব্দীর শুরুতে, বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, অটোমোবাইল শিল্পে গণ উৎপাদনের ধারণা প্রবেশ করে। এই সময়ে, হেনরি ফোর্ডের ফোর্ড মোটর কোম্পানি অ্যাসেম্বলি লাইনের ধারণা প্রবর্তন করে, যা অটোমোবাইল উৎপাদনকে দ্রুত এবং সাশ্রয়ী করে তোলে। এর ফলে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা আরও সুসংহত হয় এবং এই শতাব্দীতে গাড়ির নকশা ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।

২১শ শতাব্দীতে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে অটোমোবাইল উৎপাদনে অটোমেশন, কম্পিউটার-এইডেড ডিজাইন (CAD), এবং বৈদ্যুতিক ও স্বয়ংক্রিয় গাড়ির মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়। ধীরে ধীরে, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ আরও বহুমুখী এবং প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে ওঠে, যা আধুনিক গাড়ির নকশা এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

এক নজরে ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার
সাধারণ পদবী (EIIN) অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার
বিভাগ ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রতিষ্ঠানের ধরন প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন ফুল-টাইম
লেভেল এন্ট্রি, মিড
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা ০ – ২ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন ৳৩০,০০০ – কাজ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন ৳৩০,০০০ – কাজ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়স ২২ – ৩০ বছর
মূল স্কিল গাড়ির ইঞ্জিন সম্পর্কিত জ্ঞান, যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত জ্ঞান
বিশেষ স্কিল গাণিতিক দক্ষতা, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা, দলগত কাজে দক্ষতা

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার এর ক্যারিয়ার কেমন এবং ভবিষ্যৎ কি ?

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার সম্পন্ন করলে আপনার সামনে খুলে যাবে অসংখ্য সম্ভাবনা যার দ্বারা আপনি নিজের এবং দেশের উন্নয়ন করতে পারবেন। শুধু বাংলাদেশ নয় বরং সারা বিশ্বে গাড়ি শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধির সাথে সাথে এই পেশার চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলেছে।

প্রধান বিষয়বস্তু

  • যানবাহনের সেফটি ও পরিবেশ সংক্রান্ত নিয়মাবলী
  • অটোমোবাইল ইঞ্জিনের গঠন ও কার্যপ্রণালী
  • অটোমোবাইল ফুয়েল এবং লুব্রিকেন্টস
  • যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত
  • মোটরগাড়ির ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম

ক্যারিয়ার সুযোগ

  • গাড়ি নির্মাতা সংস্থায় টেকনিশিয়া
  • মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
  • অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার
  • উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ ইঞ্জিনিয়ার
  • সার্ভিস এডভাইজার

নিচে ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা গুলো আলোচনা করা হলঃ 

  • সার্ভিস সেন্টার: গাড়ির মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ডায়াগনস্টিকসের কাজ করতে পারেন।
  • অটো পার্টস কোম্পানি: গাড়ির যন্ত্রাংশের ডিজাইন, উৎপাদন এবং বিক্রয় বিভাগে কাজ করতে পারেন।
  • গাড়ি কোম্পানি: গাড়ির নকশা, উৎপাদন, এবং গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে কাজ করার সুযোগ।
  • পরিবহন কোম্পানি: পরিবহন ব্যবস্থাপনা এবং ফ্লিট ম্যানেজমেন্টে জড়িত হতে পারেন। 

আরো বিভিন্ন ভাবে আপনি এই পেশার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে এই পেশার দক্ষ মানুষ এর সংকট। সুতরাং এই পেশার জন্য আপনার দক্ষতা এবং জ্ঞান দিয়ে খুব সহজেই গড়তে পারবেন নিজের ক্যারিয়ার।

সমাজে ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মানা কেমন ?

সাধারনত সমাজে ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের সাধারণত সম্মানের সাথে দেখা হয়, যখন তারা তাদের কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রদর্শন করেন। যদিও সিভিল বা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তুলনায় অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কিছুটা কম প্রচলিত, তবুও এই পেশার গুরুত্ব এবং চাহিদা ক্রমবর্ধমান। শুধু আমাদের বাংলাদেশেই নয় বরং সারা বিশ্বের এই পেশার মানুষদের যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়।

এন্ট্রি লেভেলে সাধারণত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ শুরু করতে পারবেন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা সার্ভিসিং বিভাগের প্রধান হিসাবে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব।

ডিপ্লোমা ইন অটোমবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয় 

একজন ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান:

টেকনিক্যাল স্কিল

  1. অটোমোবাইল ডিজাইন এবং CAD সফটওয়্যার:
    • গাড়ির অংশ এবং সিস্টেম ডিজাইন করার জন্য কম্পিউটার-এইডেড ডিজাইন (CAD) সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা।
  2. ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যানালাইসিস:
    • স্ট্রেস অ্যানালাইসিস, থার্মাল অ্যানালাইসিস এবং ফ্লুইড ডায়নামিক্সের মতো ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্লেষণ করার দক্ষতা।
  3. অটোমোটিভ ইলেকট্রনিক্স:
    • গাড়ির ইলেকট্রনিক সিস্টেম যেমন ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট (ECU), অ্যান্টি-লক ব্রেকিং সিস্টেম (ABS), এবং এয়ারব্যাগ সিস্টেম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান।
  4. অটোমোটিভ মেকানিক্স:
    • গাড়ির ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন, ব্রেক সিস্টেম, এবং সাসপেনশন সিস্টেমের কার্যকারিতা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান।
  5. উৎপাদন প্রযুক্তি:
    • গাড়ি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত বিভিন্ন উৎপাদন প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি সম্পর্কে দক্ষতা।
  6. উৎপাদন প্রক্রিয়া:
    • গাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়া, বিশেষ করে অ্যাসেম্বলি লাইন এবং মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান।
  7. ডায়াগনস্টিক সরঞ্জাম:
    • গাড়ির ত্রুটি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সরঞ্জাম ব্যবহার করার দক্ষতা।
  8. উদ্ভাবন এবং টেকসই প্রযুক্তি:
    • গাড়ির জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি এবং টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান।

সফট স্কিল

  1. দলগত কাজের দক্ষতা:
    • সহকর্মী, ডিজাইনার, এবং অন্যান্য প্রকৌশলীদের সাথে কার্যকরভাবে কাজ করার ক্ষমতা।
  2. নেতৃত্ব:
    • প্রকল্প এবং উৎপাদন দল পরিচালনার দক্ষতা, বিশেষ করে সময়মত এবং কার্যকর প্রকল্প সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে।
  3. উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা:
    • গাড়ির ডিজাইন এবং কার্যকারিতা উন্নয়নে নতুন ধারণা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষমতা।
  4. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা:
    • গাড়ির যান্ত্রিক এবং ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জটিল সমস্যাগুলির দ্রুত এবং কার্যকর সমাধান করার দক্ষতা।
  5. যোগাযোগ দক্ষতা:
    • প্রযুক্তিগত ধারণাগুলি সহজভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা, বিশেষ করে টিম মিটিং এবং ক্লায়েন্ট প্রেজেন্টেশনে।
  6. সময় ব্যবস্থাপনা:
    • একাধিক প্রকল্পের কাজ এবং সময়সীমা সঠিকভাবে মেনে চলার ক্ষমতা।

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার উচ্চ শিক্ষা

পাবলিক ইউনিভার্সিটি (সরকারি):

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)। যেখানে শুধু মাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়া সুযোগ রয়েছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST) এবং এসোসিয়েট মেম্বার অফ দা ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (AIME)-তে।

বেসরকারি ইউনিভার্সিটি:

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা ইউনিভার্সিটি ব্যথিত। অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, এফোর্টেবল টিউশন ফি, সন্ধ্যাকালীন ক্লাস এবং চাকরি করে পড়াশোনার সুযোগ।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষাঃ

ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা চাইনা, রাশিয়া, ভারত সহ অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রাহণ করতে পারে। যেমন, ইউকে (UK), ইউএসএ (USA), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ড (Netherlands), রোমানিয়া (Romania), ইতালি (Italy), পর্তুগাল (Portugal), ফ্রান্স (Franch), জাপান (Japan), জার্মানি (Germany), পোল্যান্ড (Poland) সহ ইউরোপের এবং পশ্চিমের প্রায় অধিকাংশ দেশে উচ্চ গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রতিটি দেশের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুল-ফিল করতে হয়। উলেক্ষ্য যে, অসাধ্য কিছু না, চাইলেই সম্ভব। অনেকে পড়াশোনার উদেশ্য বাহিরে গিয়ে, পড়াশোনা শেষ করে বেশ ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রন্থা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য না। ডিপ্লোমাতে অধ্যায়নরত প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য একই রুলস বিদ্যামান।

ডিপ্লোমা ইন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির ক্ষেত্র সমূহ

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ডিপ্লোমা শেষ করার পর বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে। কারণ একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রসারিত। নিম্নে সরকারি এবং বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্র সমূহ গুলো তুলে ধরা হলো:

সরকারি ক্ষেত্র সমূহ

  • বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (BRTA): সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ, যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা, এবং লাইসেন্সিং।
  • বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (RHD): সড়ক নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা।
  • বাংলাদেশ রেলওয়ে: রেলগাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, ডিজেল ও ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ ব্যবস্থাপনা।
  • বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন (BSEC): অটোমোবাইল উৎপাদন, প্রকৌশল এবং রক্ষণাবেক্ষণ।
  • বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB): টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা প্রদান।
  • বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (FBCCI): শিল্প উন্নয়ন ও অটোমোবাইল খাতে নীতি প্রণয়ন।

বেসরকারি ক্ষেত্র সমূহ

  • অটোমোবাইল উৎপাদন কোম্পানি: যানবাহন উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ এবং প্রকৌশল ব্যবস্থাপনা।
  • গাড়ি সার্ভিসিং এবং মেরামত কেন্দ্র: যানবাহনের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ডায়াগনস্টিক কাজ।
  • অটোমোবাইল বিক্রয় প্রতিষ্ঠান: গাড়ি বিক্রয়, কাস্টমার সার্ভিস, এবং বিক্রয় পরবর্তী সেবা প্রদান।
  • অটোমোবাইল পার্টস প্রস্তুতকারী কোম্পানি: গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন, গুণগত মান যাচাই, এবং লজিস্টিকস।
  • রেসিং টিম এবং মোটরস্পোর্টস কোম্পানি: যানবাহন ডিজাইন, উচ্চ গতির গাড়ি প্রস্তুতি এবং রেস ট্র্যাক ম্যানেজমেন্ট।
  • গবেষণা প্রতিষ্ঠান: নতুন যানবাহন প্রযুক্তি, জ্বালানি দক্ষতা এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন।

একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী 

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার এরা সাধারনত গাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহনের উৎপাদন, ডিজাইন এবং রক্ষণাবেক্ষন করে থাকে। এছারাও তারা গাড়ির বিভিন্ন অংশ যেমনঃ ট্রান্সমিশন, ইঞ্জিন, চ্যাসিস, ব্রেক সিস্টেম ইত্যাদির ডিজাইন এবং উন্নয়ন করে থাকেন। একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের কাজের মধ্যে রয়েছে:

  • নতুন গাড়ির ডিজাইন, এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও কাঁচামাল নির্ধারণ করা।
  • গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের উন্নয়ন এবং তাদের কার্যক্ষমতা বাড়ানো।
  • গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে ও তার সমাধান কীভাবে করা যায়, তার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা।
  • গাড়ির কোনো সমস্যা হলে তা দ্রুত চিহ্নিত করে সমাধান করা।
  • গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ নির্মাণের যাবতীয় কারিগরি কাজ তদারকি করা।
  • গাড়িতে নতুন প্রযুক্তি যেমন ইলেকট্রিক এবং হাইব্রিড প্রযুক্তি ব্যবহার করা।

ফিউচার অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং

ভবিষ্যতের অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাপক পরিবর্তনের মুখোমুখি হবে, যা প্রযুক্তির উন্নতি এবং পরিবেশগত চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে গাড়ি শিল্পকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিইয়ারিং এর কিছু দিক তুলে ধরা হলঃ 

  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে গাড়ি নিজেই চালিত হবে।
  • পরিবেশ দূষণ কমবে এবং জ্বালানি খরচ কম হবে।
  • ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকবে এবং গাড়ি চালককে বিভিন্ন তথ্য এবং সেবা প্রদান করবে।
  • গাড়ির যন্ত্রাংশ 3D প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরি করা হবে।

এছারাও আরো বিভিন্ন ধরনের উন্নতি সাধন হবে আমাদের এই দেশে অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা।

বেতন কাঠামো

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি দশম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করলে তার মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ করে বেতন বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯,৬০০ টাকার বাড়িভাড়া ভাতা এবং ১,৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। ফলে মোট বেতন-ভাতাদি দাঁড়ায় ২৭,১০০ টাকা। এই বেতন কাঠামো একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সাথে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ট্রেইনি অর্থাৎ ইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় সঠিক ডেটা নিয়ে আসা সম্ভব না। চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

শেষ কথা

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রমবর্ধমান পেশা, যা গাড়ির নকশা, উৎপাদন প্রক্রিয়া, মান নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহারে কেন্দ্রীভূত। একজন অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার গাড়ির নকশা, ইঞ্জিন প্রযুক্তি, মান নিয়ন্ত্রণ এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা প্রদর্শন করে গাড়ির গুণগত মান এবং উৎপাদন ক্ষমতা উন্নত করে।

অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু পুরস্কৃত পেশা, যা অটোমোবাইল শিল্পের সফলতা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে

লেখক সম্পর্কে

abhinoboschool

নিউজ
চাকরি
Home
Question
Search