ক্যারিয়ার প্রোফাইল পলিটেকনিক

এগ্রিকালচারিস্ট (ডিপ্লোমা)

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং
লিখেছেন abhinoboschool

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এমন একজন পেশাদার যিনি কৃষি খাতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করেন এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হন। ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে কৃষি প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সমাধান করা।

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পেশার সারক্ষেপ

৮৬৪ সালে, স্যার জন বেনেট লস প্রথমবারের মতো কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তিনি সারের মধ্যে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, এবং পটাসিয়াম যুক্ত করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন। এই উদ্ভাবন কৃষি প্রকৌশল পেশার সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মাটির উর্বরতা ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রয়োগকে উদ্বুদ্ধ করে।

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পেশার ইতিহাস

কৃষি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার পেশার ইতিহাস দীর্ঘ এবং বহুমুখী। সাধারণত কৃষি প্রকৌশলের মূল ধারণা প্রাচীন সভ্যতায় পাওয়া যায়, যখন মানুষ প্রথম কৃষি পদ্ধতিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন প্রয়োগ করতে শুরু করেছিল। তখনকার মানুষ প্রাথমিকভাবে পানি সেচ, মাটি চাষ, এবং ফসল উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন হাতিয়ার ও পদ্ধতি ব্যবহার করত।

১৮ শতকে শিল্প বিপ্লবের সময় কৃষিতে যান্ত্রিক উদ্ভাবনের এক নতুন যুগের সূচনা হয়। স্টিম ইঞ্জিনের আবিষ্কার কৃষি প্রকৌশলে একটি বড় পরিবর্তন আনে, কারণ এই সময় থেকেই ফসল কাটার জন্য মেকানিক্যাল হারভেস্টার এবং অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু হয়।

১৯শ এবং ২০শ শতাব্দীর মধ্যে, কৃষি প্রকৌশল আরও উন্নত হয়, এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির বিকাশ ঘটে, যা ফসল উৎপাদনের কার্যকারিতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে। ডিপ্লোমা কৃষি ইঞ্জিনিয়ারদের গুরুত্ব তখন থেকেই বাড়তে থাকে, কারণ তারা কৃষি যন্ত্রপাতি পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করে আসছেন।

এক নজরে এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার
শিক্ষাক্রমের নাম (EIIN) ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রোগ্রামের ধরণ পূর্ণ-সময়ের ডিপ্লোমা
কোর্সের মেয়াদ ৩-৪ বছর (সাধারণত ৮ সেমিস্টার)৪ বছর (সাধারণত ৮ সেমিস্টার)
যোগ্যতা এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ
মূল স্কিল কৃষি যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, মাটি ও ফসল ব্যবস্থাপনা, কৃষি প্রযুক্তি ও সমস্যা সমাধান দক্ষতা
শিক্ষা ক্ষেত্র কৃষি যন্ত্রপাতি ডিজাইন, মাটি ও জলবায়ু ব্যবস্থাপনা, কৃষি প্রযুক্তি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা
কাজের ক্ষেত্র কৃষি খামার, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও সরবরাহকারী কোম্পানি, সেচ প্রকল্প, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
প্রফেশনাল যোগ্যতা CAD, ERP, কৃষি যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের সার্টিফিকেট, সেচ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ
কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ: জুনিয়র এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, সেচ প্রকল্প ম্যানেজার
কর্মক্ষেত্রের ধরণ কৃষি খামার, সেচ প্রকল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
উন্নতি ও অগ্রগতি সিনিয়র এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ার, প্রকল্প ব্যবস্থাপক, কৃষি গবেষণা প্রধান
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বেতনসীমা ৳১৫,০০০ – ৳৩০,০০০

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ক্যারিয়ার কেমন এবং ভবিষ্যৎ কি ? 

ক্যারিয়ার সম্ভাবনা

ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্যারিয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সাধারণত, এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থী কৃষি প্রকৌশলী, ফার্ম ম্যানেজার, বা কৃষি প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ শুরু করে। কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর, এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়াররা সিনিয়র প্রকৌশলী, কৃষি পরামর্শক, এবং কৃষি প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদে উন্নীত হয়ে থাকে।

এছাড়াও কর্মক্ষেত্রের বৈচিত্র্য দিক থেকে কৃষি বিভাগ, সরকারি ও বেসরকারি কৃষি সংস্থা, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, এবং কৃষি ভিত্তিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বাংলাদেশের কৃষি খাত ক্রমাগত আধুনিকীকরণের পথে এগিয়ে চলেছে। ফলে দেশে এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদাও বাড়ছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়াও, ড্রোন প্রযুক্তি, সঠিক কৃষি চর্চা (precision agriculture), এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া নতুন নতুন প্রযুক্তি, এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। টেকসই কৃষি চর্চা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কিত উদ্যোগগুলির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধির কারণে, এ পেশায় আরও নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে।

সমাজে একজন এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মানা কেমন

বাংলাদেশের এবং বহির বিশ্বের প্রেক্ষাপটে একজন এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের সম্মান এবং মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ। এই পেশার গুরুত্ব এবং সম্ভাবনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর সাথে সাথে সমাজে এই পেশার সম্মানও দিন দিন বাড়ছে। যেমনঃ

সরকারি চাকরিতে মূল্যায়ন

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কৃষি বিভাগে সম্মানজনক পদে কাজ করেন। সরকারি চাকরিতে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সমাজে এটির জন্য তারা বিশেষভাবে সম্মানিত হন।

পেশাগত সম্মান

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কৃষি উৎপাদন, মাটি ও ফসল ব্যবস্থাপনা, এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের এই দক্ষতা এবং পেশাগত গুরুত্বের জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরে তারা বিশেষভাবে সম্মানিত হন।

সামাজিক মর্যাদা

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা সমাজে একটি বিশেষ মর্যাদা পান। তাদের কাজের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার ফলে তারা সমাজে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হন এবং সমাজে তাদের কাজকে সম্মানের চোখে দেখা হয়।

একজন এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয় 

একজন ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়াদের বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়। আমরা চাই এই দক্ষতা ও জ্ঞানকে ২টি ভাগে ভাগ করতে পারি। ১ম হচ্ছে সফট স্কিল এবং ২য় হচ্ছে টেকনিক্যাল স্কিল। নিম্নে ২টি স্কিলের কোন কোন বিষয় এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারদের জানতে হয় তা উল্লেখ্য করা হলোঃ

টেকনিক্যাল স্কিল

  • Crop Management:
    ফসল উৎপাদন এবং তার সঠিক পরিচর্যার জন্য ফসল ব্যবস্থাপনার জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে জমির ব্যবহার, সার প্রয়োগ, এবং সেচ ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত।
  • Soil Science:
    মাটি সংক্রান্ত জ্ঞান এগ্রিকালচারিস্টদের জন্য অপরিহার্য। 
  • Irrigation Systems:
    সঠিক সেচ ব্যবস্থা কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক। 
  • Pest and Disease Management:
    ফসলের পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধের জন্য এই দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
  • Agricultural Machinery:
    কৃষি যন্ত্রপাতির কার্যকরী ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। 
  • Post-Harvest Technology:
    ফসল কাটার পর সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য পোস্ট-হারভেস্ট প্রযুক্তির জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। 
  • Agro-Economics:
    কৃষি অর্থনীতি সম্পর্কে জ্ঞান এগ্রিকালচারিস্টদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

উপরের উল্লেখিত স্কিল ছাড়াও আরো কিছু স্কিল রয়েছে যা এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারদের শিখতে হয়। এছাড়াও কিছু সফট স্কিল রয়েছে, যেমনঃ

সফট স্কিল

  • সমস্যা সমাধানের দক্ষতা:
    কৃষি খাতে উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সমাধানের ক্ষমতা।
  • যোগাযোগ দক্ষতা:
    প্রযুক্তিগত ধারণাগুলি সহজভাবে ব্যাখ্যা করার এবং কৃষক ও ম্যানেজমেন্টের সাথে সুসমন্বয় বজায় রাখার দক্ষতা।
  • উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা:
    কৃষি প্রক্রিয়ায় নতুন সমাধান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষমতা।
  • সময় ব্যবস্থাপনা:
    কৃষি কাজের সময়সীমা এবং মৌসুমী কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার ক্ষমতা।
  • নেতৃত্ব:
    কৃষি প্রকল্প এবং দল পরিচালনার দক্ষতা, যা কৃষি খাতে কার্যকরভাবে কাজ করতে সহায়ক।
  • দলগত কাজের দক্ষতা:
    সহকর্মী এবং কৃষকদের সাথে কার্যকরভাবে কাজ করার ক্ষমতা।

এই সফট স্কিলগুলো একজন এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ করতে নয়, বরং একটি পেশাদার ও সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ার গড়তে সহায়ক।

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারর উচ্চ শিক্ষা

পাবলিক ইউনিভার্সিটি (সরকারি):

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)। যেখানে শুধু মাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়া সুযোগ রয়েছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST) এবং এসোসিয়েট মেম্বার অফ দা ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (AIME)-তে।

বেসরকারি ইউনিভার্সিটি:

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা ইউনিভার্সিটি ব্যথিত। অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, এফোর্টেবল টিউশন ফি, সন্ধ্যাকালীন ক্লাস এবং চাকরি করে পড়াশোনার সুযোগ।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষাঃ

ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা চাইনা, রাশিয়া, ভারত সহ অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রাহণ করতে পারে। যেমন, ইউকে (UK), ইউএসএ (USA), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ড (Netherlands), রোমানিয়া (Romania), ইতালি (Italy), পর্তুগাল (Portugal), ফ্রান্স (Franch), জাপান (Japan), জার্মানি (Germany), পোল্যান্ড (Poland) সহ ইউরোপের এবং পশ্চিমের প্রায় অধিকাংশ দেশে উচ্চ গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রতিটি দেশের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুল-ফিল করতে হয়। উলেক্ষ্য যে, অসাধ্য কিছু না, চাইলেই সম্ভব। অনেকে পড়াশোনার উদেশ্য বাহিরে গিয়ে, পড়াশোনা শেষ করে বেশ ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রন্থা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য না। ডিপ্লোমাতে অধ্যায়নরত প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য একই রুলস বিদ্যামান।

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির ক্ষেত্র সমহূ

ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সম্পন্ন পেশা। এই ডিগ্রিধারীরা কৃষি খাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পান। আসুন জেনে নিই তাদের জন্য কী কী ক্ষেত্র খোলা রয়েছে:

সরকারি ক্ষেত্রসমূহ

  • কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর:
    ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচারিস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ফিল্ড অফিসার, কৃষি কর্মকর্তা, এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত পদে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে।
  • বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (BADC):
    বিএডিসিতে কৃষি প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী, এবং অন্যান্য পদে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়।
  • বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI):
    ধান চাষ এবং গবেষণার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পদে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
  • বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI):
    বিভিন্ন ফসলের গবেষণা এবং উন্নয়নে কৃষি প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়:
    কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক বা গবেষক হিসেবে কাজ করার সুযোগ।
  • পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (PKSF):
    গ্রামীণ উন্নয়ন এবং কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পে কৃষি প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার সুযোগ।

বেসরকারি সেক্টর

  • এগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিজ:
    বিভিন্ন এগ্রো-প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিতে কৃষি প্রযুক্তিবিদ, প্রোডাকশন ম্যানেজার, এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল অফিসার হিসেবে কাজ।
  • সার এবং কীটনাশক কোম্পানি:
    সার এবং কীটনাশক কোম্পানিতে প্রোডাকশন ম্যানেজার, প্রযুক্তিবিদ, বা রিসার্চ অফিসার হিসেবে কাজ করার সুযোগ।
  • এগ্রিকালচার কনসালটেন্সি ফার্ম:
    কৃষি প্রকৌশল পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করা, যেখানে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়।
  • কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী কোম্পানি:
    কৃষি যন্ত্রপাতির বিক্রয়, বিপণন, এবং রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করার সুযোগ।
  • ফার্ম ম্যানেজমেন্ট:
    বিভিন্ন বড় ফার্ম এবং কৃষি প্রকল্পে ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করার সুযোগ।
  • কৃষি ভিত্তিক এনজিও:
    কৃষি উন্নয়ন এবং গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে কৃষি প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করার সুযোগ।

এই ক্ষেত্রগুলোতে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয়তা, নিয়োগ প্রক্রিয়া, এবং পদভেদে অন্যান্য শর্তাবলী বিভিন্ন হতে পারে। 

একজন এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী ? 

একজন এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াদের কাজগুলো নিম্নে উল্লেখ্য করা হলোঃ

  • ফসল উৎপাদন পদ্ধতি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা
  • মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা
  • কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ
  • পোকামাকড় এবং রোগ প্রতিরোধ
  • কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান
  • কৃষি প্রকল্পের কার্যক্রম তদারকি
  • পরিবেশ সংরক্ষণ
  • কৃষি অর্থনীতির বিশ্লেষণ
  • ফসল সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ
  • প্রযুক্তিগত রিপোর্ট তৈরি

ফিউচার ট্রেন্ড এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার 

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভবিষ্যতে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি এবং ট্রেন্ড আসছে, যা এই ক্ষেত্রটিকে আরও উন্নত এবং টেকসই করে তুলবে। নিচে তা পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলঃ

ড্রোন টেকনোলজ

  • কৃষিক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ফসলের সার্বিক পর্যবেক্ষণ, সঠিকভাবে সার প্রয়োগ, এবং বীজ বপনের কাজে সহায়ক।

জেনেটিক্যালি মডিফাইড ক্রপ

  • জেনেটিক্যালি মডিফাইড ফসলের উন্নয়ন এবং ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক ও টেকসই কৃষি চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সাসটেইনেবল এগ্রিকালচাস্ট

  • পরিবেশগত দিক থেকে সচেতন কৃষি পদ্ধতি, যেমন অর্গানিক ফার্মিং, পুনঃব্যবহারযোগ্য উপাদান এবং পানি সংরক্ষণে সাসটেইনেবল প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে।

ইনডোর ফার্মি

  • ভবিষ্যতে ইনডোর ফার্মিং প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে, যেখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফসল উৎপাদন করা হবে, যা সারা বছরই ফসল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করবে।

বায়োফার্টিলাইজার এবং বায়োপেস্টিসাইড

  • রসায়নিক সারের পরিবর্তে বায়োফার্টিলাইজার এবং বায়োপেস্টিসাইডের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে, যা মাটির স্বাস্থ্য এবং ফসলের মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।

উপরের ট্রেন্ডগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই বর্তমানে সফল। তবে কিছু ক্ষেত্রে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা উপরের বিষয়গুলোকে আরও বিস্তৃতভাবে দেখতে পাব বলে আমি মনে করি। এই প্রযুক্তি এবং ট্রেন্ডগুলো এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, যেখানে কৃষি হবে আরও সঠিক, দক্ষ, এবং পরিবেশবান্ধব।

বেতন কাঠামো

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি দশম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করলে তার মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ করে বেতন বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯,৬০০ টাকার বাড়িভাড়া ভাতা এবং ১,৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। ফলে মোট বেতন-ভাতাদি দাঁড়ায় ২৭,১০০ টাকা। এই বেতন কাঠামো একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সাথে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ট্রেইনি অর্থাৎ ইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় সঠিক ডেটা নিয়ে আসা সম্ভব না। চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

শেষ কথা

এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা কৃষি উৎপাদন, ভূমি ব্যবস্থাপনা, এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত হন। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ তাদের দক্ষতা এবং কৃষি সম্পর্কিত জ্ঞানকে সম্মান করে থাকেন। তাদের কাজ শুধু তাদের নিজস্ব কৃষি প্রতিষ্ঠানে নয়, বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই কৃষি উন্নয়নে ব্যাপকভাবে মূল্যায়িত হয়।

এই পেশায় যোগদানের মাধ্যমে একজন এগ্রিকালচারিস্ট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার শুধু নিজের একটি মজবুত এবং উদ্দীপনামূলক ক্যারিয়ার গড়ে তোলেন না, বরং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ সংরক্ষণ, এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে

লেখক সম্পর্কে

abhinoboschool

নিউজ
চাকরি
Home
Question
Search