ক্যারিয়ার প্রোফাইল

অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার

লিখেছেন abhinoboschool

একজন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার ইঞ্জিনিয়ার, যিনি তার কাজের মধ্যে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা এবং সততার পরিচয় দেন, তিনি সমাজে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন। পোশাক শিল্পের উন্নতির জন্য তাদের অবদান এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে সবাই গুরুত্ব দেয়, যা তাদের সম্মানের ভিত্তি গড়ে তোলে। আজ আমরা এই আর্টিকেলে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের সম্পর্কে জানব।

অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট

অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশের মধ্যে একটি জনপ্রিয় পেশা। অ্যাপারেল বলতে মূলত তৈরি পোশাক বোঝায়। আমাদের পরিধানের পোশাকের তৈরি থেকে শুরু করে একজন ক্রেতা এর কাছে যাওয়া পর্যন্ত কাজগুলো অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ। এককথায়, পন্যের যথাযথ উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তিগত বিদ্যাই হচ্ছে অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং।

এই ডিপার্টমেন্টের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে পোশাক শিল্পে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তৈরি করা, যারা উন্নত মানের পোশাক উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই বিভাগ প্রধানত পোশাক তৈরির প্রক্রিয়া, টেক্সটাইল টেকনোলজি, এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ওপর কেন্দ্র করে গঠিত।

অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার পেশার ইতিহাস

১৮শ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং ১৯শ শতাব্দীর শুরুতে শিল্প বিপ্লবের কারণে টেক্সটাইল উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। অতঃপর হাতের কাজ ও ম্যানুয়াল লুম পরিবর্তে মেশিন ব্যাবহার শুরু হয় যার ফলে টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে।

২০শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, পোশাক শিল্পে গণ উৎপাদনের ধারণা প্রবেশ করে।এই সময়ে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার পেশা আরও সুনাম অর্জিত হয়। এই শতাব্দীতে উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।

২১শ শতাব্দীতে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে পোশাক উৎপাদনে অটোমেশন, কম্পিউটার-এইডেড ডিজাইন (CAD), এবং 3D প্রিন্টিং-এর মতো নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়। ধীরে ধীরে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ আরও বহুমুখী হয়ে উঠে। 

এক নজরে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং
সাধারণ পদবী (EIIN) প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ার, মান নিয়ন্ত্রণ ইঞ্জিনিয়ার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, প্রক্রিয়া ইঞ্জিনিয়ার
প্রতিষ্ঠানের ধরন পোশাক কারখানা, টেক্সটাইল মিল, ফ্যাশন হাউজ, রিটেইল কোম্পানি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান
ক্যারিয়ারের ধরন দীর্ঘমেয়াদী, প্রযুক্তিনির্ভর, ম্যানেজমেন্ট ট্র্যাক, গবেষণা ও উন্নয়ন
লেভেল এন্ট্রি লেভেল, মিড লেভেল, সিনিয়র লেভেল, ম্যানেজমেন্ট লেভেল
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা সাধারণত ০-২ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য আয় মাসিক $৩০০-$৮০০ (ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল)
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা ২১-৩০ বছর
বিশেষ স্কিল CAD, ERP, প্যাটার্ন মেকিং, লিন ম্যানুফ্যাকচারিং, টেকসই উৎপাদন কৌশল
ক্যারিয়ার সম্ভাবনা উচ্চ, নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ, টেকসই উৎপাদনে বৃদ্ধির সম্ভাবনা
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা টেক্সটাইল বা অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং-এ ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি
ভবিষ্যৎ চাহিদা অটোমেশন, টেকসই উৎপাদন, ফাস্ট ফ্যাশন, এবং স্মার্ট টেক্সটাইলের মতো নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো
প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার জ্ঞান CAD (Computer-Aided Design), ERP (Enterprise Resource Planning), প্যাটার্ন মেকিং সফটওয়্যার

অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের ক্যারিয়ার কেমন এবং ভবিষ্যৎ কি 

বর্তমান সময়ে পোশাক শিল্পের দ্রুত প্রসারের কারণে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শুধু আমাদের দেশই নয় বরং উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও এই শিল্পটি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে যার ফলে এই পেশার জন্য কর্মসংস্থানের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) ইত্যাদি প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে এই পেশার পরিধি আরও বাড়বে। পৃথিবী যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি সাসটেইনেবল ফ্যাশন ডিজাইন এবং উৎপাদনের দিকে অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে।

সমাজে একজন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের সম্মানা কেমন

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারের সম্মানা যথেষ্ট। কারন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে পোশাক শিল্প একটি প্রধান অর্থনৈতিক খাত। যেহেতু অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াররা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে সেহেতু তাদের সম্মানের কোন ত্রুটি হয় না। 

একজন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়

একজন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াররের প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান:

টেকনিক্যাল স্কিল

  1. CAD সফটওয়্যার: পোশাক ডিজাইন এবং প্যাটার্ন তৈরি করার জন্য কম্পিউটার-এইডেড ডিজাইন (CAD) সফটওয়্যার ব্যবহার।
  2. ERP সিস্টেম: উৎপাদন ও লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনার জন্য এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ERP) সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা।
  3. উৎপাদন অটোমেশন: অটোমেটেড উৎপাদন সিস্টেম ও পিএলসি (প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার) সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করে।
  4. টেক্সটাইল প্রযুক্তি: বিভিন্ন ধরনের টেক্সটাইল ফাইবার, কাপড় এবং তাদের বৈশিষ্ট্য বোঝা।
  5. ওয়ার্কফ্লো অ্যানালিসিস: উৎপাদন প্রক্রিয়ার স্রোত বিশ্লেষণ ও অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অপসারণ।
  6. বিশেষ স্কিল: প্যাটার্ন মেকিং, লিন ম্যানুফ্যাকচারিং, টেকসই উৎপাদন কৌশল জানা।
  7. প্যাটার্ন মেকিং: পোশাকের ডিজাইন প্যাটার্ন তৈরি এবং প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ।

ইত্যাদি ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল স্কিল রয়েছে যেগুলো বাস্তবিক ভাবে কাজ করার সময় শিখতে হবে।

সফট স্কিল

  1. দলগত কাজের দক্ষতা: সহকর্মী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সাথে কার্যকরভাবে কাজ।
  2. নেতৃত্ব: প্রকল্প ও দল পরিচালনার দক্ষতা।
  3. উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা: নতুন সমাধান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষমতা।
  4. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: জটিল বৈদ্যুতিক সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান।
  5. যোগাযোগ দক্ষতা: প্রযুক্তিগত ধারণাগুলি সহজভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা।
  6. সময় ব্যবস্থাপনা: একাধিক প্রকল্প ও সময়সীমা মোকাবেলা করার ক্ষমতা।

অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার উচ্চ শিক্ষা

পাবলিক ইউনিভার্সিটি (সরকারি):

ডিপ্লোমা ইন অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET)। যেখানে শুধু মাত্র ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হলে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়া সুযোগ রয়েছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST) এবং এসোসিয়েট মেম্বার অফ দা ইনস্টিটিউশন অফ ইঞ্জিনিয়ার্স (AIME)-তে।

বেসরকারি ইউনিভার্সিটি:

বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকে শুধুমাত্র হাতেগুনা কয়েকটা ইউনিভার্সিটি ব্যথিত। অনেকগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, এফোর্টেবল টিউশন ফি, সন্ধ্যাকালীন ক্লাস এবং চাকরি করে পড়াশোনার সুযোগ।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষাঃ

ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থীরা চাইলেই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বর্তমানের ট্রেন্ড অনুযায়ী আমাদের দেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা চাইনা, রাশিয়া, ভারত সহ অধিকাংশ দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ গ্রাহণ করতে পারে। যেমন, ইউকে (UK), ইউএসএ (USA), ফিনল্যান্ড (Finland), নেদারল্যান্ড (Netherlands), রোমানিয়া (Romania), ইতালি (Italy), পর্তুগাল (Portugal), ফ্রান্স (Franch), জাপান (Japan), জার্মানি (Germany), পোল্যান্ড (Poland) সহ ইউরোপের এবং পশ্চিমের প্রায় অধিকাংশ দেশে উচ্চ গ্রহণ করতে পারেন। তবে প্রতিটি দেশের রিকুয়ারমেন্ট অনুযায়ী কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুল-ফিল করতে হয়। উলেক্ষ্য যে, অসাধ্য কিছু না, চাইলেই সম্ভব। অনেকে পড়াশোনার উদেশ্য বাহিরে গিয়ে, পড়াশোনা শেষ করে বেশ ভালো ক্যারিয়ার গড়েছেন। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রন্থা শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য না। ডিপ্লোমাতে অধ্যায়নরত প্রতিটা শিক্ষার্থীর জন্য একই রুলস বিদ্যামান।

একজন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির ক্ষেত্র সমূহ

অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়াররের ডিপ্লোমা শেষ করার পর বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে। কারন একজন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রসারিত। নিম্নে সরকারি এবং বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্র সমূহ গুলো তুলে ধরা হলোঃ

সরকারি ক্ষেত্র সমূহ

  1.  বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (BUTEX): পোশাক ও টেক্সটাইল প্রযুক্তি গবেষণা ও শিক্ষা।
  2. বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট (BTTI): টেক্সটাইল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান।
  3. বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (BGMEA): পোশাক শিল্পের নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন।
  4. বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (BGMEA): পোশাক শিল্পের নীতি নির্ধারণ ও উন্নয়ন।
  5. বস্ত্র মন্ত্রণালয়: পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
  6. বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB): টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষা প্রদান।
  7. বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি (FBCCI): শিল্প উন্নয়ন ও বাণিজ্য নীতিমালা সংক্রান্ত কাজ।

বেসরকারি ক্ষেত্র সমূহ

  1. পোশাক উৎপাদন কোম্পানি: পোশাকের প্রোডাকশন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং অপারেশন ম্যানেজমেন্ট।
  2. টেক্সটাইল মিল: কাপড় উৎপাদন, বুনন প্রযুক্তি এবং টেক্সটাইল টেস্টিং।
  3. ফ্যাশন হাউজ: ডিজাইন, প্যাটার্ন মেকিং এবং পোশাক উন্নয়ন।
  4. রিটেইল কোম্পানি: স্টক ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লাই চেইন এবং উৎপাদন পরিকল্পনা।
  5. পোশাকের কাস্টমাইজেশন সংস্থা: কাস্টম পোশাক তৈরির প্রক্রিয়া এবং সেবা প্রদান।
  6. গবেষণা প্রতিষ্ঠান: নতুন টেক্সটাইল উপকরণ এবং প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন।
  7. ফ্যাশন ডিজাইন স্টুডিও: পোশাক ডিজাইন এবং প্রোটোটাইপিং।

উল্লেক্ষ্য কর্মক্ষেত্র অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা ও ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ প্রদান করে।

একজন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী

সাধারনত আপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ অনেকভাবে বিবর্তিত এবং বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মূল কাজ হচ্ছে পোশাক উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা, যা প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত মান নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত প্রসারিত। প্রথমত তারা  উৎপাদনের পরিকল্পনা এবং অঙ্কন প্রস্তুত করেন। তারপর তাদের কাজ হলো উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং উপকরণ নির্ধারণ করা।

উৎপাদন প্রক্রিয়ার সময়, তারা সেলাই এবং অন্যান্য উৎপাদন প্রযুক্তি পরিচালনা করেন, যেমন কাপড় কাটিং, সেলাই, এবং ফিনিশিং প্রক্রিয়া এরপর মান নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে, তারা পোশাকের ত্রুটি শনাক্ত করেন এবং সেগুলি সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এভাবে তারা বিভিন্ন ধাপ অবলম্বন করে তাদের কাজ সংঘঠিত করে থাকেন।

ফিউচার ট্রেন্ড ইন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং 

  • উন্নত অটোমেশন ও রোবোটিক্স: উৎপাদন প্রক্রিয়ার অটোমেশন আরও উন্নত হবে, যার ফলে সেলাই, কাপড় কাটিং এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও দক্ষ হবে। রোবোটিক্স ব্যবহারে মানবশ্রমের প্রয়োজন কমবে এবং উৎপাদন কস্ট কমবে।
  • টেকসই উৎপাদন প্রযুক্তি: পরিবেশবান্ধব ও টেকসই উৎপাদন কৌশল যেমন পুনর্ব্যবহৃত ফাইবার, কম পানির ব্যবহার, এবং কম কার্বন নিঃসরণ প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে।
  • ডিজিটাল টুইনস এবং সিমুলেশন: ডিজিটাল টুইনস প্রযুক্তি ব্যবহারে ভার্চুয়াল মডেলিং এবং সিমুলেশন মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়ার পূর্বাভাস এবং অপ্টিমাইজেশন করা যাবে।
  • ভিআর ও আর প্রযুক্তির উন্নয়ন: ডিজাইন ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) প্রযুক্তির উন্নয়ন, যা ডিজাইন এবং উৎপাদন প্রশিক্ষণকে আরও উন্নত করবে।
  • বিগ ডেটা ও এনালিটিক্স: ডেটা বিশ্লেষণ এবং বড় ডেটার ব্যবহার মাধ্যমে উৎপাদন দক্ষতা, বাজারের চাহিদা এবং পণ্যের গুণগত মান আরও উন্নত করা যাবে।

বেতন কাঠামো

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কাঠামো সাধারণত সরকারি দশম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার দশম গ্রেডে চাকরি শুরু করলে তার মূল বেতন ১৬,০০০ টাকা। এর সাথে অতিরিক্ত ভাতা যোগ করে বেতন বৃদ্ধি পায়, যার মধ্যে রয়েছে ৯,৬০০ টাকার বাড়িভাড়া ভাতা এবং ১,৫০০ টাকার চিকিৎসা ভাতা। ফলে মোট বেতন-ভাতাদি দাঁড়ায় ২৭,১০০ টাকা। এই বেতন কাঠামো একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের চাকরির প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত হয় এবং অভিজ্ঞতা ও পদোন্নতির সাথে এটি বাড়তে থাকে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি, রাষ্ট্রয়াত্ত, জাতীয়করণকৃত এবং সরকারি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ৪৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকেন।

বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ট্রেইনি অর্থাৎ ইন্টার্ন হিসেবে ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করতে পারে। ইন্টার্ন শেষে ১৫,০০০ টাকা থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। তবে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হওয়ায় সঠিক ডেটা নিয়ে আসা সম্ভব না। চাকরির অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।

শেষ কথা 

আপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রমবর্ধমান পেশা, যা পোশাক শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়ার দক্ষতা, মান নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ব্যবহারে কেন্দ্রীভূত। একজন অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ার উৎপাদন পরিকল্পনা, টেক্সটাইল প্রযুক্তি, মান নিয়ন্ত্রণ এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা প্রদর্শন করে পোশাকের গুণগত মান এবং উৎপাদন ক্ষমতা উন্নত করে।

অতএব, এই ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাটি একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু পুরস্কৃত পেশা, যা পোশাক শিল্পের সফলতা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে

লেখক সম্পর্কে

abhinoboschool

নিউজ
চাকরি
Home
Question
Search