অটোক্যাড (AutoCAD) হলো একটি কম্পিউটার ভিত্তিক ডিজাইন ও ড্রাফটিং সফটওয়্যার, যা প্রকৌশলী, স্থপতি এবং অন্যান্য পেশাজীবীদের ডিজাইন ও ড্রাফটিং এর জন্য বহুল ব্যবহৃত হয়। এটি বর্তমান যুগে ড্রয়িং ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। আগামীতে অনেকের ক্যারিয়ারের মূল ভিত্তি হতে পারে এই সফটওয়্যারটির উপর দক্ষতা অর্জন। এই নিবন্ধে আমরা অটোক্যাড এন্ড ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো:
- অটোক্যাড কি?
- অটোক্যাডের ইতিহাস এবং প্রচলন
- অটোক্যাডের ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয়তা
- অন্যান্য CAD সফটওয়্যারের তুলনায় AutoCAD এর অধিক জনপ্রিয়তার কারন
- অটোক্যাডের মূল ফিচারসমূহ
- অটোক্যাডের সর্বাধিক ব্যবহৃত কয়েকটি টুলস এর তালিকা
- অটোক্যাড কেনো শিখবেন?
- কোথায় এবং কিভাবে অটোক্যাড শিখবেন?
- অটোক্যাড শিখে যেভাবে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়বেন
- অটোক্যাড জানা থাকলে যে সকল প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ থাকে
- অটোক্যাড এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
- পরিশেষে
- অটোক্যাড এন্ড ক্যারিয়ার সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
অটোক্যাড কি?
আমেরিকান কোম্পানি অটোডেস্ক কর্তৃক তৈরি একটি কম্পিউটার ভিত্তিক ডিজাইন সফটওয়্যার অটোক্যাড। ক্যাড (CAD) শব্দের অর্থ কম্পিউটার এইডেড ড্রাফটিং বা ডিজাইন (Computer Aided Drafting/Design)। কম্পিউটারের মাধ্যমে জটিল স্থাপত্য, প্রকৌশল এবং যন্ত্রপাতির 2D এবং 3D নকশা তৈরি করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এর সাহায্যে সাধারণ ড্রইং ছাড়াও স্থাপত্য/প্রকৌশল ডিজাইন ও ড্রয়িং, ব্লক, সিম্বল, লোগো ডিজাইন, গ্রিল ডিজাইন, এমব্রয়ডারী ডিজাইন করা যায়। বর্তমানে সাধারণ ব্যবহারকারী ছাড়াও প্রকৌশল ক্ষেত্রে সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা অটোক্যাডের মাধ্যমে ডিজাইন এবং ড্রাফটিং করে থাকে।
অটোক্যাডের ইতিহাস এবং প্রচলন
পূর্বে ইন্টারেক্ট ক্যাড এবং মাইক্রো ক্যাড প্রোগ্রামের সাহায্যে খুব সাধারণ ড্রয়িং করা হতো। পরবর্তীতে অটোডেস্ক কর্তৃক ১৯৮২ সালে প্রথম 2D (দ্বিমাত্রিক) ড্রয়িং সফটওয়ার হিসাবে AutoCAD বাজারে আসে। পরবর্তীতে 3D (ত্রিমাত্রিক) ড্রইং ও ডিজাইন ফিচার এর সাথে যুক্ত করা হয় এবং ১৯৮৬ সালে ৪ বছরের মধ্যেই এটি বিশ্বব্যাপী সর্ববৃহৎ ক্যাড প্রোগ্রাম হিসাবে জায়গা করে নেয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রায় প্রতিবছর অটোক্যাডের সংস্করণ বাজারে আসতে থাকে যেগুলো পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে আরো উন্নত এবং শক্তিশালী। বর্তমানে সর্বশেষ বাজারে “অটোক্যাড-২০২৫” ভার্সন উন্মুক্ত হয়েছে যা অটোডেস্ক কর্তৃক প্রকাশিত এর ৩৯ তম সংস্করণ। এর মধ্যে কয়েকটি ভার্সন অনেক বেশি জনপ্রিয় এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি। যেগুলোর মধ্যে ২০০৭, ২০১৩, ২০১৫ এবং ২০২২ অন্যতম।
অটোক্যাডের ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে অটোক্যাডের ব্যবহার ছোট থেকে বড় সকল ক্ষেত্রে বিস্তৃত এবং এর প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র সম্পর্কে আমরা জানবো।
- স্থাপত্যশিল্প (Architecture): স্থাপত্যশিল্পীরা অটোক্যাড ব্যবহার করে ঘর, সুউচ্চ দালান, ব্রিজ, ভাস্কর্য এবং অন্যান্য স্থাপনার ডিজাইন করেন। এটি তাদের আরও সঠিকভাবে নির্ভুল এবং বিস্তারিত ডিজাইন তৈরি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অটোক্যাডের 3D মডেলিং ফিচার ব্যবহার করে স্থাপনার বাস্তবসম্মত ছবি তৈরী করা যায়।
- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (Civil Engineering): সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা এই সফটওয়ার ব্যবহার করে ভবন, রাস্তা, সেতু, বাঁধ এবং অন্যান্য অবকাঠামোর স্ট্রাকচারাল ডিজাইন করেন। সূক্ষ্ম পরিমাপের নকশা তৈরী করা ছাড়াও এটির সাহায্যে নির্মাণ কাজের নির্ভুল এবং বিস্তারিত ড্রাফটিং তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে তৈরি নকশা অন্য যে কোন ইঞ্জিনিয়ার সহজে বুঝতে পারে এবং মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এতে নকশা সহজে সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজনে সহজে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যায়।
- মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Mechanical Engineering): বিভিন্ন যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ তৈরির পূর্বে ডিজাইন করতে অটোক্যাড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের নিত্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। সফটওয়্যারটির জুম কমান্ড ব্যবহার করে অনেক যন্ত্রাংশ বড় স্কেলে অঙ্কন করা যায়। এতে অনেক সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ নির্ভুলভাবে ডিজাইন করা সম্ভব হয়।
- ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Electrical Engineering): অটোক্যাড ব্যবহার করে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন কাঠামোর ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইন করতে পারেন। বর্তমানে এর সাহায্যে ইলেকট্রিকাল লাইন, সুইট বোর্ড, ফ্যান, লাইট, এসি, একুয়াস্টিক কাজের অবস্থান চিহ্নিতকরণ ছাড়াও ক্ষুদ্র স্কেলে বিভিন্ন সার্কিট ডিজাইন করা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল ও গৃহস্থালি পণ্য এর ডিজাইন করা হয় অটোক্যাডের সাহায্যে।
- সাধারণ ব্যবহার (General Use): ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ ছাড়াও অটোক্যাডের সাহায্যে বর্তমানে ড্রইং এবং ডিজাইন সম্পর্কিত অনেক ধরণের কাজ করা হয়। যেমন অ্যানিমেশন কার্টুন-সিনেমা তৈরিতে, গার্মেন্টস শিল্পে নতুন পোশাকের নকশা তৈরি, পরিবর্তন-পরিবর্ধন, লোগো ডিজাইন, গ্রিল ডিজাইন, বিভিন্ন কাঠের কাজের নকশা, প্লাস্টিক পণ্যের নকশা, এমব্রয়ডারী ডিজাইন ইত্যাদি। অটোক্যাড ব্যবহার করে স্বল্প সময় ও শ্রমের মাধ্যমে দ্রুত নকশার কাজ করা সম্ভব হচ্ছে ফলে বিভিন্ন উৎপাদনশীল কারখানা গুলো ভিন্ন মডেলের পণ্য বাজারে আনতে পারছে।
অন্যান্য CAD সফটওয়্যারের তুলনায় AutoCAD এর অধিক জনপ্রিয়তার কারন
বর্তমানে ড্রইং এবং ডিজাইনের জন্য AutoCAD ছাড়াও SolidWorks, CATIA, SketchUp, Revit, FreeCAD, Blender, Rhino, BricsCAD প্রভৃতি সফটওয়্যার রয়েছে। তবে কয়েকটি কারণে অটোক্যাড অন্যদের তুলনায় অধিক জনপ্রিয়। যেমনঃ
- প্রচলিত সকল সফটওয়্যার এর মধ্যে এটি সর্বপ্রথম চালু হয়েছিল। দীর্ঘদিন চালু থাকায় অনেক প্রকৌশলী, স্থাপতি এবং ডিজাইনেরদের ভিতর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
- অন্যান্য সফটওয়্যার এর তুলনায় এর ইন্টারফেস তুলনামূলক ইউজার ফ্রেন্ডলি। এতে স্বল্প সময়ে এটি শেখা এবং দক্ষতা অর্জন করা যায়।
- AutoCAD সফটওয়্যারটিতে একই সাথে 2D এবং 3D ড্রইং করা যায় যা অন্যান্য CAD সফটওয়্যার থেকে একে এগিয়ে রাখে।
- বর্তমানে পার্সোনাল কম্পিউটারে বহুল ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এ অটোক্যাড সহজেই ইন্সটল করা যায়।
- এটির ফাইল ফরমেট .dwg বিশ্বের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত CAD ফরম্যাট গুলির একটি। এটি সহজে সকলেই বুঝতে পারে এবং অন্য যে কারোর সাথে শেয়ার করা যায়।
- এটির সাথে বিভিন্ন ধরনের প্লাগইন এবং এক্সটেনশন যুক্ত করা যায়, ফলে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং আরো বেশি ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়ে ওঠে।
অটোক্যাডের মূল ফিচারসমূহ
অটোক্যাড এর বেশ কিছু অসাধারণ ফিচার রয়েছে যার কারণে এটি ডিজাইনারদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল:
- 2D এবং 3D ডিজাইন: এই সফটওয়্যারটিতে একই সাথে যে কোনো ড্রয়িং 2D এবং 3D মোডে তৈরি করা যায়। 3D মোডের মাধ্যমে বাস্তব চিত্র সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- DWG ফাইল ফরমেট: সফটওয়্যারটির নিজস্ব ফাইল ফরমেট রয়েছে (dwg) যা বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত ড্রয়িং ফাইল ফরমেট।
- লেয়ার: সফটওয়্যারটিতে যে কোন ড্রইং করার সময় অসংখ্য লেয়ার যুক্ত করা যায় ফলে ড্রইং এর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন রং এবং অবস্থান সঠিক ভাবে চিহ্নিত করা যায়।
- ব্লক তৈরী: সফটওয়্যারটিতে যেকোনো ড্রইং এর কয়েকটি অংশকে একত্রিত করে ব্লক বা ডাইনামিক ব্লক তৈরি করা যায়। ফলে শ্রম এবং সময়ের অপচয় কম হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ব্যবহার করা যায়।
- নিজস্ব ব্রাউজার ও মোবাইল অ্যাপ: সফটওয়্যারটি ইনস্টলের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজস্ব ওয়েব ব্রাউজার ইনস্টল হয়। ফলে যে কোনো ফাইল নিরাপদে আদান প্রদান করা যায় এবং প্লে স্টোরে নিজস্ব অ্যাপ থাকায় ফাইলগুলি মোবাইলের মাধ্যমেও দেখার সুযোগ পাওয়া যায়।
অটোক্যাডের সর্বাধিক ব্যবহৃত কয়েকটি টুলস এর তালিকা
অটোক্যাড সফটওয়্যার এ অসংখ্য টুলস রয়েছে যেগুলো সাধারণভাবে কমান্ড নামে পরিচিত। এগুলো মাউসের দ্বারা সিলেক্ট করে অথবা কিবোর্ড শর্টকাটের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি টুলস এবং তাদের কাজের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:
- Line: সরলরেখা আঁকার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Polyline: একাধিক লাইনের সমন্বয়ে একটি একক অবজেক্ট (Poly) তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
- Circle: বৃত্ত বা সার্কেল আঁকার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Rectangle: আয়তক্ষেত্র আঁকার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Arc: গোলাকার বা আংশিক বৃত্তের আকার তৈরি করতে Arc টুল ব্যবহার করা হয়।
- Trim: অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Extend: এক বা একাধিক লাইন বা আর্ককে একটি নির্দিষ্ট লাইনের দিকে বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Offset: একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে লাইনের সমান্তরাল বা কপি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
- Mirror: ডিজাইনের প্রতিফলন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
- Move: ডিজাইনের যেকোনো অংশ স্থানান্তরিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Copy: ডিজাইনের একটি অংশ কপি করে অন্য জায়গায় সরানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Rotate: ডিজাইনের কোনো অংশকে নির্দিষ্ট কোণে ঘোরানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Scale: ডিজাইনের অংশের আকার পরিবর্তন করতে, অর্থাৎ বড় বা ছোট করতে ব্যবহৃত হয়।
- Fillet: দুটি লাইনের মধ্যে গোলাকার কোণ (radius) তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
- Chamfer: দুটি লাইনের সংযোগস্থলে তির্যক বা কাটা প্রান্ত তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Array: কোনো অবজেক্টের কপি সারি (row), কলাম (column), বা সার্কুলার প্যাটার্নে তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
- Hatch: নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে টেক্সচার বা প্যাটার্ন যুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
- Dimension: ডিজাইনের অংশগুলোর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ব্যাসার্ধ, কোণ ইত্যাদি মাপ উল্লেখ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Text: ডিজাইনের মধ্যে টেক্সট বা লেবেল যোগ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Zoom: ডিজাইনের অংশে জুম ইন বা আউট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
অটোক্যাড কেনো শিখবেন?
এটি একজন মানুষের বহুমুখী কর্মের দুয়ার খুলে দেয়। এ কাজে যে যত বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারবে তার চাহিদা তত বেশি। এটি শিখে আপনি সহজেই উচ্চ বেতনের চাকরি পেতে পারেন, বহু প্রতিষ্ঠান তাদের ডিজাইন এবং ড্রাফটিং কাজের জন্য দক্ষ ক্যাড অপারেটর খুঁজে থাকে। এই সফটওয়্যারটির মাধ্যমে আপনি নিজের সৃজনশীলতা প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন যা চাকরিদাতাদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি করতে পারে। অটোক্যাডে দক্ষতা থাকলে টেকসই ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা থাকে। যথেষ্ট দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে নকশা ভিত্তিক উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাওয়া যায়। এছাড়াও বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং খাতে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ঘরে বসে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন নকশা তৈরি করে দেশ ও দেশের বাইরে বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের সুযোগ আছে।
কোথায় এবং কিভাবে অটোক্যাড শিখবেন?
বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অটোক্যাড শেখার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও অনলাইন এবং নিজে নিজে অনুশীলনের মাধ্যমেও অনেকে অটোক্যাডে দক্ষতা অর্জন করে থাকে। নিয়মিত অনুশীলন করলে মাত্র তিন মাসেই যে কেউ নিজেকে অটোক্যাডে দক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এটি একটি পেইড সফটওয়্যার হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে শেখার সুযোগ রয়েছে।
- সরকারি মাধ্যম: বাংলাদেশের সরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান যেমন: পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টিটিসি, টিএসসি ইত্যাদি গুলোতে ছয় মাস মেয়াদী সম্পূৰ্ণ বিনামূল্যে অটোক্যাড কোর্স পরিচালনা করা হয়। এ সমস্ত কোর্সগুলোতে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দ্বারা অটোক্যাড শেখানো এবং কোর্স শেষে পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সরকারি সনদ প্রদান করা হয়।
- বেসরকারি মাধ্যম: বেসরকারি পর্যায়ে সারাদেশে যে কোনো কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট বা অটোক্যাড জানা যে কোনো ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে এটি শেখার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়েও অটোক্যাড শিখে কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সরকারি সনদপত্র পাওয়া যায়।
- অনলাইন কোর্স: বর্তমানে অনলাইনে খান একাডেমী, Udemy, Coursera, edX এর মত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এটি শেখার সুযোগ আছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি চাকরিজীবীরাও সুবিধামতো সময়ে এ সমস্ত প্লাটফর্মে অটোক্যাডে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তবে এই প্লাটফর্মগুলো সাধারণত বিভিন্ন পেইড প্যাকেজ অফার করে।
- Youtube টিউটোরিয়াল: বর্তমানে অটোক্যাড শেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় Youtube এর বিভিন্ন টিউটোরিয়াল। এগুলো সাধারণত বিনামূল্যে দেখা যায় এবং শিক্ষার্থী বা চাকরিজীবীরা তাদের সুবিধাজনক সময়ে টিউটোরিয়াল গুলো দেখে অটোক্যাডে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। Youtube এ প্রচুর AutoCAD টিউটোরিয়াল আছে যেগুলো থেকে যে কেউ এটি শিখে কাঙ্খিত চাকরি পেতে পারেন।
অটোক্যাড শেখার পাশাপাশি অনুশীলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এটি একটি সফটওয়্যার বেজ প্রোগ্রাম এবং অনেক বেশি টুলস নিয়ে কাজ করতে হয় তাই শেখার পর যথাযথ প্র্যাকটিস না করলে সহজেই এটি ভুলে যেতে পারে। তবে নিয়মিত প্র্যাকটিসের মাধ্যমে সহজেই দক্ষতা অর্জন করা যায়।
অটোক্যাড শিখে যেভাবে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়বেন
অটোক্যাডে দক্ষতা থাকলে আপনি সরকারি, বেসরকারি ও নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এটি শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং বা আর্কিটেকচার এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং ম্যানুফ্যাকচারিং, অ্যানিমেশন এবং প্রোডাক্ট ডিজাইন ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে। এর কয়েকটি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো।
- ড্রাফটসমান (Draftsman): ড্রাফটসম্যান হিসেবে কাজ করার একটি বড় ক্ষেত্র অটোক্যাড। অটোক্যাডের জ্ঞানসম্পন্ন ড্রাফটসম্যানরা বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ, যান্ত্রিক বা বৈদ্যুতিক সিস্টেমের জন্য পরিকল্পনা ও নকশা তৈরি করেন।
- ইঞ্জিনিয়ার ও স্থপতি (Engineer & Architect): অটোক্যাড জানা থাকলে আর্কিটেকচার/ সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা খুব সহজেই বিভিন্ন স্থাপত্যের নকশা তৈরি করতে পারেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ড্রইং/ ডিজাইন দেখে সে অনুযায়ী কাজ করা সহজ হয়। ফলে খুব সহজেই তাদের ক্যারিয়ারে উন্নতি করার সুযোগ থাকে এবং চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে এটি আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে সহায়তা করে।
- CAD অপারেটর (CAD Operator): CAD অপেরাটররা বিভিন্ন ধরণের CAD সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডিজাইন এবং ড্রাফটিং এর কাজ করে। বর্তমানে বিভিন্ন কনস্ট্রাশন কনসালটেন্সি ফার্মে CAD অপারেটর পদে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে ভালো বেতনে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে।
- প্রোডাক্ট ডিজাইনার: বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে বর্তমানে পণ্যের ডিজাইনে নতুনত্ব আনতে এটির সহায়তা নেয়া হচ্ছে। এর সাহায্যে নতুন পণ্য এর ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরী সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সিমুলেশন করা যায়। অটোক্যাড জানা থাকলে আপনি আপনার কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
- গার্মেন্টস শিল্প: বর্তমানে গার্মেন্টস শিল্পে নতুন পোশাক ডিজাইন করতে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে ফলে দক্ষতা থাকলে আপনি বাংলাদেশের এই সর্ববৃহৎ সেক্টরের যেকোন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পেতে পারেন।
- ফ্রিল্যান্সার হিসেবে: অটোক্যাড জানা থাকলে আপনি শুধু দেশেই না বরং দেশের বাইরেও আপনার মেধা কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তি যুগে অটোক্যাডের মাধ্যমে ঘরে বসে বিভিন্ন ড্রইং এবং ডিজাইন তৈরি করে তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারেন।
অটোক্যাড জানা থাকলে যে সকল প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ থাকে
অটোক্যাডে দক্ষতা অর্জন করলে সহজেই নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পাওয়া যায়। এমন কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা নিম্নরূপ
- গণপূর্ত অধিদপ্তর
- স্থাপত্য অধিদপ্তর
- শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর
- বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড।
- বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা
- শিল্প মন্ত্রণালয় আওতাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
- অটোমোবাইল শিল্প প্রতিষ্ঠানে
- ডিজাইন ও নির্মাণ ফার্মে
- গার্মেন্টস শিল্পে
- ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল সম্পর্কিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে
অটোক্যাড এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ড্রইং এবং ডিজাইন খাতে প্রযুক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি অটোক্যাড এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নিখুঁত ডিজাইন এর পাশাপাশি 2D ও 3D মডেলিং এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সিমুলেশন করতে প্রায় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেই একজন অটোক্যাড অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের যে কোন চাকরিতে এটির ব্যবহার জানা একটি বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। 3D মডেলিং, BIM (Building Information Modeling) এবং ক্লাউড কম্পিউটিং এর উন্নতির সাথে অটোক্যাডের প্রয়োজনীয়তা ভবিষ্যৎ এ আরও বৃদ্ধি পাবে। অটোক্যাডে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আপনি আপনার ক্যারিয়ারকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে পারেন।
পরিশেষে
বর্তমান সময়ে অটোক্যাড শেখা হতে পারে আপনার ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের জন্য একটি স্মার্ট পদক্ষেপ। এটি আপনার পেশাগত জীবনে ব্যাপক সুযোগ এনে দিতে পারে। আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য কিংবা প্রোডাক্ট ডিজাইনে আগ্রহী হন তাহলে অটোক্যাডে দক্ষতা আপনাকে দ্রুত উন্নতি করতে সহায়তা করবে।
লিমা খাতুন, অটোক্যাড এন্ড ক্যারিয়ার, তেজগাঁও, ঢাকা, প্রকাশ-২৩ অক্টোবর, ২০২৪,
<https://abhinoboschool.com/অটোক্যাড-এন্ড-ক্যারিয়ার/>
অটোক্যাড এন্ড ক্যারিয়ার সংক্রান্ত প্রশ্ন ও উত্তর
অটোক্যাড শিখতে কত সময় লাগে?
নিয়মিত অনুশীলন করলে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই অটোক্যাড শিখে নেওয়া যায়।
অটোক্যাড জানা থাকলে আমি কি ধরনের চাকরি পেতে পারি?
এটি জানা থাকলে ড্রাফটসম্যান, CAD অপারেটর, Product Designer সহ নকশা সম্পর্কিত বিভিন্ন চাকরির সুযোগ রয়েছে।
অটোক্যাড এর সবচেয়ে সহজ ভার্সন কোনটি?
এর অনেকগুলি ভার্সন থাকলেও ২০০৭ ভার্সন টি সবচেয়ে ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং নতুনদের জন্য সহজ হিসেবে বিবেচিত।